জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের জামানত ছাড়া ঋণ সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ক তথ্যাদির যথাযথ প্রচার-প্রচারণার অভাবে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এসএমই উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহায়তা নিশ্চিতকল্পে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’-এর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন এবং সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।
শনিবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এসএমই উদ্যোক্তাদের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ। তারা নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। এ সমস্যা নিরসনে আমাদের নীতিনির্ধারকদের নীতি সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ই-কমার্স এবং সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য বেচা-কেনায় সুবিধা নিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তিনি এক্ষেত্রে সরকার প্রবর্তিত ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন’-এর ব্যবহার করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের নারী উদ্যোক্তারা জামানত ছাড়া ১০ লাখ টাকার ঋণসুবিধা নিতে পারছেন। এছাড়া এসএমই উদ্যোক্তাদের রপ্তানির পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান নির্ধারিত শুল্ক হার হ্রাসের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
সেমিনারে ঢাকায় নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার লিলি নিকোলাস বলেন, বাংলাদেশের কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষাব্যবস্থা ও রপ্তানির উন্নয়নে কানাডা সরকার একযোগে কাজ করছে। বাণিজ্য সম্প্রসারণে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের প্রতি জোরারোপ করেন তিনি। বাংলাদেশের এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য বহুমুখীকরণ, বাজার সম্প্রসারণ এবং সক্ষমতা বাড়াতে আরও বেশি হারে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক মানের। তবে আমাদের কলেজগুলোতেও যে উচ্চমানের দক্ষতার সঙ্গে শিক্ষা দেয় তা অনেকেই জানে না। এ কারণে হয়তো বাংলাদেশি অনেক শিক্ষার্থী এখনো কানাডা যেতে পারে না।
ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান বলেন, কোভিড মহামারির সময়কালে সৌদি সরকার এসএমই উদ্যোক্তাদের সুরক্ষায় বেশকিছু উদ্যোগ নেয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সহায়ক নতুন নীতিমালা প্রণয়ন, নীতি সংস্কার ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকরণ। বাংলাদেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য, কারণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারাই সবচেয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে থাকে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার সমীর সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের এলসিডি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে ২০২৬ সাল থেকে আমাদের এসএমইসহ রপ্তানিকারকদের পণ্য রপ্তানিতে অধিক শুল্ক দিতে হবে, যা ৮ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যেক্তাদের জিডিপিতে অবদান ২৮ শতাংশ। বেসরকারিখাত স্থানীয় কর্মসংস্থানের প্রায় ৯০ শতাংশের সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, এসএমই উদ্যেক্তাদের ব্যবসায় পরিচালনায়, মূলধন স্বল্পতা, অবকাঠামো, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও মানবসম্পদের স্বল্পতা, পণ্য রপ্তানিতে বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা এবং কমপ্লায়েন্সসহ নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন।
সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে আমাদের এসএমইখাতের উদ্যোক্তারা প্রধানত সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, আর্থিক ও নীতি সহায়তা, যথাযথ অবকাঠামো এবং দক্ষ মানবসম্পদের স্বল্পতার মুখোমুখি হবেন। এমতাবস্থায়, কার্যকর দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, আর্থিক ও নীতি সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রম আইনের সংশোধন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই, অবকাঠামো খাতের টেকসই উন্নয়নসহ নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেগাপ্রকল্পগুলোর কার্যক্রম বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বহুমুখী পাটজাত পণ্যের সেরা নারী উদ্যোক্তা তরঙ্গের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর ইয়াসমিন, পিপলস লেদার ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজবিন বেগম, বেঙ্গল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম আসিফ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (এসএমই-এসপিডি) ড. মো. কবির আহমেদ অংশ নেন। ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এসএম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান), সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পর্ষদের সদস্যরা অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
অর্থসংবাদ/এসএম
