আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম নেমেছে তিন মাসের সর্বনিম্নে। চীনের মিশ্র অর্থনৈতিক ডাটা ও ওপেকভুক্ত দেশগুলো রফতানি বাড়ানোয় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে পণ্যটির। পাশাপাশি ডলার শক্তিশালী হওয়ায় নিম্নমুখী হয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। খবর রয়টার্স।
নতুন করে গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৪ ডলারের নিচে নেমেছে। গতকালও তা অব্যাহত ছিল। গতকাল আইসিই ফিউচারসে পণ্যটির আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম কমেছে ১ ডলার ১১ সেন্ট। ব্যারেলপ্রতি মূল্য নেমেছে ৮০ ডলার ৫০ সেন্টে। একই সময়ে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম কমেছে ১ ডলার ২০ সেন্ট। প্রতি ব্যারেলের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৬ ডলার ১৭ সেন্টে। মঙ্গলবার থেকে ডব্লিউটিআইর মূল্য গত ২৪ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্নে নেমেছে।
ফরেন এক্সচেঞ্জ করপোরেশন ওএএনডিএর বিশ্লেষক ক্রেগ এরলাম বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে কিনা সেদিকে সতর্ক নজর রাখছে ব্যবসায়ীরা। অঞ্চলটিতে সংঘাত ছড়ালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বৃহৎ অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা দূর হয়ে যাচ্ছে।’
বিনিয়োগ ব্যাংকিং কোম্পানি ইউবিএসের বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো বলেছেন, ‘ওপেক জোটের সদস্যদেশগুলো জ্বালানি তেল রফতানির পরিমাণ বাড়ানোয় বাজারমূল্যে নিম্নমুখী প্রভাব পড়েছে। ওপেক দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল রফতানি বাড়িয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোয় অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে তারা বিক্রি বাড়িয়েছেন। সম্ভবত রফতানিকারক দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার চেয়ে বেশি জ্বালানি তেল উত্তোলন করে ফেলেছিল।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সরবরাহ নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ কমে এসেছে। যদিও চীনে অক্টোবরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছে। তবে অন্যান্য পণ্য ও পরিষেবার মোট রফতানির পরিমাণ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি হারে কমে গেছে।
আর্থিক পরিষেবা ও বিনিয়োগ কোম্পানি সিটি ইনডেক্সের বিশ্লেষক ফিওনা সিনকোটা বলেছেন, ‘চীনের প্রধান রফতানি গন্তব্য পশ্চিমা দেশগুলো থেকে চাহিদা বা ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া চীনা অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্রমাগত পতনের ইঙ্গিত দেয়।’
আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে বাজার সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ বেড়েছে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল। মজুদ বাড়ার ফলে গুদামগুলো থেকেও ক্রয়ের পরিমাণ কমে এসেছে।
মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এখন আশা করছে, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে মোট পেট্রোলিয়াম ব্যবহারের পরিমাণ দৈনিক তিন লাখ ব্যারেল কমে যাবে, যা প্রতিষ্ঠানটির আগের পূর্বাভাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। এর আগে এক পূর্বাভাসে এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দৈনিক এক লাখ ব্যারেল চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
বিনিয়োগকারীরা উচ্চ সুদহার সুবিধা উপভোগ করতে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। ফলে মুদ্রা বিনিময় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। এতে মুদ্রাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় ডলারে জ্বালানি তেল ক্রয় খরচ বেড়েছে ভিন্ন মুদ্রার গ্রাহকদের। তাই ব্যবহার সীমিত করেছেন ক্রেতারা, যা জ্বালানিটির চাহিদা কমাতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
অর্থসংবাদ/এসএম