ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ইউরোপের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। ইউরোপীয়ানদের ক্রয়ক্ষমতার ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, মানুষজনের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। পাশাপাশি চ্যালেঞ্জিং আর্থিক অবস্থার কারণে এক-তৃতীয়াংশ ‘ইউরোপীয়কে এক বেলার খাবার এড়িয়ে যেতে বাধ্য হতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক প্রকাশিত ইউরোপীয় ব্যারোমিটার অন পোভার্টি অ্যান্ড প্রিকারিয়াসনেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর ইউরো নিউজ।
জরিপে অংশগ্রহণ করা ৩৮ শতাংশ উত্তরদাতা প্রতিদিন তিনবেলার খাবারের খরচ বহন করতে অক্ষম বলে জানিয়েছে। ৪২ শতাংশ মানুষ আর্থিক অভাবে এক বেলার খাবার এড়িয়ে যান। অভিভাবক ও পিতামাতারা চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন।
প্রায় ১০ হাজার অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে জরিপটি চালানো হয়। এটি পরিচালনা করেছে ফরাসি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইপসস। এতে অর্থ সহায়তা করেছে দাতা সংস্থা ফ্রেঞ্চ সেকোর্স পপুলার।
জরিপে দেখা যাচ্ছে, ২৯ শতাংশ মানুষ তাদের আর্থিক পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করে। ৫৬ শতাংশ তাদের আর্থিক অবস্থাকে স্থিতিশীল বলছে। মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ নিজেদের অবস্থাকে ভালো বলেছে। চলমান পরিস্থিতিতে যেকোনো অপ্রত্যাশিত ব্যয় তাদের অর্থনৈতিক বিপদে ফেলতে পারে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান দাম ও স্থবির বেতনের কারণে প্রায় অর্ধেক ইউরোপীয় শিগগির অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় আশঙ্কা করছে।
ইউরোস্ট্যাটের ২০২১ সালের তথ্যানুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামগ্রিক ঝুঁকিপূর্ণ দারিদ্র্যের হার ১৭ শতাংশ ছিল। মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ আর্থিকভাবে স্থিতিশীল বোধ করছে। বেশির ভাগ ইউরোপীয় এরই মধ্যে কঠিন ত্যাগ স্বীকার করেছে। যেমন খাবার এড়িয়ে যাওয়া, ঘর গরম না করা, টাকা ধার নেয়া ও অর্থের অভাবে চিকিৎসা না করা।
বিদ্যমান আর্থিক পরিস্থিতির কারণে বেশির ভাগ ইউরোপীয়কে বাধ্য হয়ে জটিল সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বিভিন্ন সেক্টরজুড়ে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে আপস করে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। যেমন অনেকে ক্ষুধার্ত থেকে এক বেলার খাবারের মূল্য পকেটে রেখে দিচ্ছে। প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ইউরোপীয় এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এ সমস্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি গ্রিস ও মলদোভায় পাওয়া গেছে। ক্রমবর্ধমান খরচের কারণে হিটার ব্যবহার এড়ানো, অর্থ ধার ও স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাগুলোকে অবহেলা করা হচ্ছে।
জোসেফ রাউনট্রি ফাউন্ডেশনের জুনের একটি সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৫৭ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবার খাদ্যের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে রয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার প্রভাবটি স্পষ্ট হয়েছে উঠেছে। যদিও মূল্যস্ফীতির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানগুলোয় ধীর হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তার পরও খাদ্য ও খাদ্য-উপকরণের খরচ বৃদ্ধি অব্যাহত। ২০২২ সালে ইউরোপের মূল্যস্ফীতি তিন গুণ বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান ব্যয়, বিশেষ করে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে অর্ধেকেরও বেশি অংশগ্রহণকারীর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। গ্যাসের দাম ও অপ্রত্যাশিত খরচে উদ্বিগ্ন জরিপের ৫৯ শতাংশ মানুষ। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ইউরোপীয়দের ওপর আর্থিক চাপ দিন দিন পরিস্থিতিকে আরো সংকটময় করে তুলেছে।