নেলসনের পিচে ঘাসের আধিক্য আর মাঠে বাতাস থাকার পরেও বাংলাদেশের পেসারদের কাছ থেকে গতি আর সুইংয়ের দেখা মেলেনি। দুর্বল বোলিংয়ের সুবাদে টাইগারদের উপর চড়াও হয়েছিলেন উইল ইয়াং এবং হেনরি নিকোলস। একজন করেছেন ৮৯, অন্যজনের রান ৯৫। তাদের এই দুই ইনিংসে ভর করেই নেলসনে কিউইরা জয় পেয়েছে ৭ উইকেটের ব্যবধানে। একইসঙ্গে তিন ম্যাচের সিরিজ জয়টাও নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকরা।
নেলসনের সাক্সটন ওভালে বুধবারের ম্যাচে আগে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ডকে ২৯২ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। শুরুতেই ভালো কিছুর দরকার ছিল কিউইদের জন্য। সেই ভালো শুরুটাই এনে দিলেন দুই কিউই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র এবং উইল ইয়াং। বাংলাদেশের পেসাররা যেন পিচের ফায়দা নিতেই ভুলে গেলেন। তিন পেসার শরীফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব আর হাসান মাহমুদের কেউই সুবিধা করতে পারেননি কিউই ওপেনারদের সামনে।
শুরুতে কিছুটা সাবধানী খেললেও যতই সময় গড়িয়েছে টাইগার পেসারদের ওপর ততই চড়াও হয়েছেন ইয়াং এবং রাচিন। আগের ম্যাচেই দুর্দান্ত শতক হাঁকিয়েছিলেন ইয়াং। সেটাই ধরে রাখলেন সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও। আর রাচিন তো বিশ্বকাপ থেকেই আছেন দুরন্ত ফর্মে।
পাওয়ারপ্লের দশ ওভারে কিউইদের সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ৬১। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ১১তম ওভারে এসে ভেঙেছে এই দুজনের জুটি। দলীয় ৭৬ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৪৫ রান করে আউট হন রাচিন।
তবে এই উইকেটের পরেই যেন বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে আরও অনেকটাই ছিটকে পড়ে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে হেনরি নিকোলসকে নিয়ে উইল ইয়াং। দুজন মিলে গড়েছেন ১২৮ রানের জুটি। স্পিন কিংবা পেস কোন বিভাগেই এই জুটির সামনে সুবিধা করতে পারেনি। সাদামাটা বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে মূলত রানই উপহার দিয়ে গিয়েছেন টাইগার বোলাররা।
উইল ইয়াং ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। ৮৯ রানে তার ইনিংসের লাগাম টানেন সেই হাসান মাহমুদই। এরপর আবারও একটা বড় জুটি দেখেছে নিউজিল্যান্ড। এদফায় নিকোলসকে সঙ্গ দিয়েছেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। নিকোলসও পেতে পারতেন সেঞ্চুরি। তবে ৯৫ রানে ফিরতে হয়েছে তাকেও। রিশাদ হাসানের দিনের দ্বিতীয় ক্যাচ ছিলেন তিনি। উইকেট পেয়েছেন শরীফুল।
বাকি সময়টা আর ভুগতে হয়নি নিউজিল্যান্ডকে। দেখেশুনেই ম্যাচ শেষ করেছেন টম ব্লান্ডেল এবং টম ল্যাথাম। কিউইদের জয় এসেছে ৭ উইকেটের ব্যবধানে। বাংলাদেশের হয়ে সফল বোলার হাসান। পেয়েছেন দুই উইকেট। অন্য উইকেট গিয়েছে শরীফুলের কাছে।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস বলতে গেলে একাই টেনে নিয়ে গিয়েছেন সৌম্য সরকার। রানখরায় ভুগতে থাকা এই ব্যাটার দীর্ঘ ৫ বছর পর সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। সবশেষ ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন এই টাইগার ক্রিকেটার। ফিফটি পেয়েছিলেন শেষ ২০১৯ সালে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় দলের প্রয়োজনে বা কোচের পছন্দে দলে এলেও ভাল কিছু করা হয়নি তার
তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বেশ বড় এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। নেলসনে নিজের ক্যারিয়ার সেরা ১৬৯ রান করেছেন ওপেনার সৌম্য। একইসঙ্গে দেশের ক্রিকেটে ওয়ানডে ইতিহাসে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। তবে এমন দিনেও দলীয় রানের বিচারে অতৃপ্তি থেকেই গেল বাংলাদেশের। শেষ ওভারে দ্রুত উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ থেমেছে ২৯১ রানে।
তার আগে মুশফিকুর রহিমের ৪৫ রান বাদে বাংলাদেশের আর কেউই বলার মত রান করতে পারেননি। তৃতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে মেহেদি হাসান মিরাজ করেছেন ১৯ রান। বোলার তানজিম সাকিবের উইলো থেকে এসেছে ১৩ রান। সৌম্যর দারুণ স্কোরের পরেও তাই দলীয় রান থেমেছে ৩০০-এর নিচে। বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত ভুগিয়েছে সেই ব্যাটিং ব্যর্থতাটাই।
এমআই