চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যদিও ধারণা করা হয়েছিল প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধির হার প্রত্যাশার চেয়ে কম হলেও ৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রকৃত অর্থে কম নয়। এতে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের চলতি বছরের গ্রীষ্মকালীন অর্থনীতি বেশ চাঙা।
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা রীতিমতো মুক্তহস্তে ব্যয় করেছেন। এ সময় তাঁরা কনসার্টে গিয়েছেন, সিনেমা দেখেছেন ও সেই সঙ্গে পণ্য কেনায় বিপুল পরিমাণে ব্যয় করেছেন। বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আরও চাঙা ছিল, পরের দিকে এসে তা গতি হারিয়েছে, কিন্তু কর্মসংস্থান ও মানুষের ব্যয়ের ধারা কমবেশি অব্যাহত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, তৃতীয় প্রান্তিকে ভোক্তা ব্যয় কিছুটা কমেছে, তবে রপ্তানি ও বিনিয়োগ বেড়েছে।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নীতি সুদের কমাবে, সে কারণে তাদের মধ্যে চাঙা ভাব এসেছে। কিন্তু দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা সেই আশায় একপ্রকার জল ঢেলে দিয়েছেন। অনেক সরকারি কর্মকর্তা মনে করছেন, মার্কিন অর্থনীতি ধাক্কা সামলে নেওয়া মাঝপথে রয়েছে, অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির হার ফেডারেল রিজার্ভের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে এবং বেকারত্বের হার তেমন একটা বাড়বে না।
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ-বাতাসে এখন নীতি সুদহার হ্রাসের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে ফেডারেল রিজার্ভ যে অর্থনৈতিক পূর্বাভাস দিয়েছে, সেখানে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আগামী বছর তিনবার নীতি সুদহার হ্রাসের কথা উল্লেখ করেছেন।
মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করায় বিনিয়োগকারী ও ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের মধ্যে স্বস্তির ভাব দেখা গেছে, যদিও ২০২৩ সালের প্রথম দিকে ক্ষণিকের জন্য মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা বেড়েছিল। নভেম্বরে সিপিআই সূচক ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে, যদিও অক্টোবরে তা ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ, অর্থাৎ অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে তা কিছুটা কমেছে। চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে তেলের দাম বাড়তে শুরু করলে সিপিআই সূচক ৩ দশমিক ৭ শতাংশ উঠে যায়, পরবর্তী সময়ে তা আবার বেশ খানিকটা কমে এসেছে।
তবে নীতি সুদহার কবে থেকে কমবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মার্চে নীতি সুদহার প্রথমবারের মতো কমানো হবে। এ নিয়ে বাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের চাঞ্চল্য তৈরি হলেও ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা বাস্তবতার দিকে চোখ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
ফেডারেল রিজার্ভের নিউইয়র্ক শাখার প্রেসিডেন্ট জন উইলিয়ামস সম্প্রতি সিএনবিসিকে বলেন, আমরা এখনো প্রকৃত অর্থে সুদহার কমানোর বিষয়ে কথা বলছি না। ফেডের শিকাগো শাখার প্রেসিডেন্ট অস্টান গুলসবি সিবিএসকে গত রোববার বলেছেন, মূল্যস্ফীতির হার এখনো লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আসেনি, তাই নীতি সুদহার কমবে—এমন আশা করা দুরাশার পর্যায়ে পড়ে যায়।
সামগ্রিকভাবে মার্কিন অর্থনীতি এখনো শক্তিশালী, গ্রীষ্মকালে অর্থনীতির গতি কিছুটা কমলেও তা খাদের নিচে পড়ে যায়নি। অনেকে মনে করেন, মার্কিন অর্থনীতির শক্তিমত্তার কারণে ফেডের পক্ষে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা কঠিন, যদিও গ্রীষ্মকালের পর থেকে মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে।