এক দেশের সাথে অন্য দেশের সম্পদের তুলনা করার প্রবণতা প্রায়ই দেখা যায়। তবে এই কাজটা কিন্তু কঠিন। কারণ, দেখা যায় বড় জনসংখ্যার দেশের অর্থনীতিও বড়; অবশ্য তার মানে এই নয় যে– মাথাপিছু আয় সেখানে উচ্চ হবে। এদিকে জিডিপি অনুপাতে মাথাপিছু নাগরিকরা কী পরিমাণ আয় করছেন— সাধারণত সেই হিসাবেই দেশগুলোকে ধনী বা দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু, সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের পার্থক্য হিসাবে করা হয় না। এই কাজটি করা আসলে দরকারি, নাহলে ক্রয় সক্ষমতার ভিত্তিতে আর্থিক সামর্থ্যের সঠিক প্রাক্কলন আসে না।
এই অবস্থায় একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরতে, সাম্প্রতিকতম তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে দ্য ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন। এটি তৈরিতে তিনটি মাপকাঠি ব্যবহার করা হয়েছে, এগুলো হলো– মার্কিন ডলারে মাথাপিছু আয়, স্থানীয় মূল্য অনুযায়ী আয় সমন্বয় (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি- পিপিপি বা ক্রয়-ক্ষমতার সমতা), এবং প্রতি ঘন্টার মজুরি/ আয়।
এর ভিত্তিতে দেশগুলোর অর্থনীতি যে সবক্ষেত্রে স্থির নয়, সে চিত্রই উঠে এসেছে। যেমন ধরুন মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-র বিচারে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, জনগণের মাথাপিছু আয়ে সপ্তম অবস্থানে আছে দেশটি। কিন্তু, আয়ই শেষ কথা নয়। সেটা দিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য বা সেবা কেনার দামটাও বিবেচ্য। এর সাথে সমন্বয় করলে যুক্তরাষ্ট্র নেমে আসে অষ্টম অবস্থানে। তাঁর ওপর যদি দীর্ঘ কর্মদিবস ও সীমিত ছুটির হিসাব করা হয়, তাহলে দেশটি ১১তম অবস্থানে চলে আসে।
জিডিপির সার্বিক আকারে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন। কিন্তু, মাথাপিছু আয়ের হিসাবে দেশটি ৬৫তম স্থানে নেমে আসে। নাগরিকদের প্রতি ঘণ্টায় আয়ের হিসাবে ৯৬ তম স্থান হচ্ছে চীনের।
কঠোর কর্মঘণ্টার সংস্কৃতি থাকা অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন হয়েছে, যেমন এদিক দিয়ে ইকোনমিস্টের প্রথম মাপকাঠিতে দক্ষিণ কোরিয়া ৩০ তম, কিন্তু মাথাপিছু আয়ের হিসাবে তা ৩১তম এবং প্রতি ঘণ্টায় আয়ের হিসাবে ৪৭ তম।
সে তুলনায়, পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ দেশে দেখা যায় উল্টো প্রবণতা। এই অঞ্চলের বেলজিয়াম, জার্মানি ও সুইডেনে পণ্য ও সেবার কম দাম এবং আকর্ষণীয় কর্ম-পরিবেশ ধরে হিসাব করলে– তারা ধনী দেশের র্যাংকিংয়ে অনেক উপরের দিকে উঠে আসে। স্থানীয় মূল্য অনুযায়ী লুক্সেমবার্গে মজুরি সবচেয়ে বেশি। আর প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গড় আয় করেন নরওয়ের বাসিন্দারা।
তবে এভাবে হিসাব করলেও পুরোপুরি সঠিক চিত্র পাওয়া যায় না। যেমন ক্রয়-ক্ষমতার সমতা বা পিপিপির মাধ্যমে এক দেশের সাথে অন্য দেশের বাজারে পাওয়া পণ্য বা সেবার মানে যে পার্থক্য, সেটিকে তুলে ধরা কঠিন। বিশেষত, বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থাকা দরিদ্র দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই প্রাক্কলন আরও জটিল হয়ে পড়ে। তাছাড়া, কিছু দেশের সরকারিভাবে দেওয়া তথ্যের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখা যায় না। যেমন কিছু দেশে (বিশেষত চীনে) আমানত সঞ্চয় হার বেশ উচ্চ; তাই পিপিপির সাথে প্রতি ঘণ্টায় জিডিপি সমন্বয়ের হিসাবে এসব দেশের জীবনযাত্রার মানের প্রতিফলন ঘটে না।
ইকোনমিস্টের র্যাঙ্কিংয়ে বিভিন্ন দেশের মানুষের গড় আয়ের (যা তাঁরা বর্তমানে আয় করছেন) তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে; তবে তাঁদের সম্পদ (অর্থাৎ এরমধ্যেই যা তাঁদের রয়েছে) সেটি যুক্ত হয়নি। অবশ্য নির্দিষ্ট একটি মাপকাঠির ওপর নির্ভর না করার ফলে- এই ধরনের তুলনামূলক হিসাব অপেক্ষাকৃত পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে।