ঋণ নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফএএস ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে বিতরনকৃত ঋণের ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯১ লাখ ২৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে একটি চক্রকে। যা মোট ঋনের ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ চক্রে রয়েছে- প্রশান্ত কুমার হালদার, প্রীতিশ কুমার হালদার, সুষ্মিতা সাহা, উজ্জল কুমার নন্দী, অমিতাভ অধিকারী, ওমর শরীফ, মৈত্রী বানী বেপারী, শাহ আলম শেখ, রতন কুমার বিশ্বাস, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, অবস্তিকা বড়াল, গোপাল গাঙ্গুলী।
এসব ব্যাক্তিরা নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গঠন করে নিজেরা এবং নিকট আত্বীয়দের (স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, ভাই,ভায়ের স্ত্রীর) নামে এফএএস ফাইন্যান্স থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করেছেন।ঋণ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর নামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- হাল ইন্টারন্যাশনাল লিঃ, সুখদা প্রপার্টিজ লিঃ, আর্থস্কোপ লিঃ, নিউট্রিক্যাল লিঃ, মেরিন ট্রাস্ট লিঃ এবং এমটিবি মেরিন লিঃ, এমএসটি ফার্মা এন্ড হেলথ কেয়ার লিঃ, জি এন্ড জি এন্টারপ্রাইজ, আরবি এন্টারপ্রাইজ, আনান ক্যামিকেলস লিঃ, দ্রিনান এপারেলস লিঃ ও বর্ন, এসএ এন্টারপ্রাইজ। এসব প্রতিষ্ঠানে অনুগত ব্যক্তিদের বহাল রেখে তাদের নিজ নামে হস্তান্তর করেছেন শেয়ারও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাইলে এসব আর্থিক দুর্নীতি-অনিয়ম শুরুতেই রোধ করে দিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সেটা করে না। বরং ক্ষেত্র বিশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এসব দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত মোট ৩২১ দিন সিআরআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ১৪ কোটি ৩৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছ বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিতরণকৃত বেশিরভাগ ঋণ এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।এসব বিষয়ে জানার জন্য এফএএস ফাইন্যান্সের ব্যাবস্থাপনা পরিাচালক প্রিতিশ কুমার সরকারের সাথে বহুবার যোগাযোগরে চেষ্টা করলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, যে সময়ে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ধীরে ধীরে খারপের দিকে যাচ্ছিল তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ছিলেন মো. শাহ আলম। বর্তমানে তিনি একই বিভাগের নির্বাহী পরিচালক। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হওয়ার জন্য আবেদনও করেছেন তিনি।
সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআিইবি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ দিয়ে থাকে। গভর্নরের মতো ডেপুটি গভর্নর নিয়োগেরও সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। তবে ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি অনুসন্ধান কমিটি করা হয়। এই অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু অনিয়ম সংঘটিত হয়। একটি কমিটির সদস্য হিসেবে রাষ্টধায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের একজন চেয়ারম্যানকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ যাকে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করা হবে সেই নির্ধারণ করে দিচ্ছে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি কে করবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মো শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের বর্তমান মহাব্যবস্থাপক জুলকারনায়েন এর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক ব্যাংকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়েই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করে। মানিটরিংয়ের দায়িত্বটাওতাদেরই। কিন্তু এই মুহূর্তে মানিটরিংয়ের ছিটেফোটাও নেই। এছাড়া প্রতি বছরই আডিট হয়সবগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে।এসব অডিট রিপোর্টে অনিয়মের তথ্যগুলো কেনোপ্রকাশ হয়না। অঘটন ঘটে যাওয়ার পরসবাই জানতে পারে কেনো। এগুলো তদারকি করার দায়িত্বটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই। আমার মনে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরসংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সাথে দুর্নীবাজদের যোগসাজস রয়েছে। একই বিভাগে যুগ যুগ ধরে কাজ করেন অনেক কর্মকর্তা। এসবজায়গাতে পরিবর্তন আনা দরকার।