জ্যান হফম্যান বলেন, ‘আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে হামলা বিশ্ব বাণিজ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। ভূরাজনীতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিদ্যমান বাণিজ্য সংকটকে আরো গভীর করছে।’
ইউএনসিটিএডির মতে, পণ্যবাহী জাহাজ লোহিত সাগর এড়িয়ে চলায় গত দুই মাসে সুয়েজ খালে ট্রানজিট কমেছে ৪২ শতাংশ। ওই সময় থেকে বাড়তি দিন ও জ্বালানি ব্যয় করে জাহাজগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে গন্তব্যে যাচ্ছে।
মিসরের সুয়েজ খাল ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। সমুদ্রপথকে বিশ্ব বাণিজ্যের ‘লাইফলাইন’ উল্লেখ করে হফম্যান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পণ্য বাণিজ্যের ৮০ শতাংশেরও বেশি সমুদ্রপথে হয়।’
ইউএনসিটিএডির মতে, সুয়েজ খাল দিয়ে সাপ্তাহিক কনটেইনার জাহাজ চলাচলের সংখ্যা বছরওয়ারি ৬৭ শতাংশ কমেছে। কারণ বিশ্বের কনটেইনার বাণিজ্যের ২০ শতাংশের বেশি সুয়েজ খাল দিয়ে চলাচল করে। রুটটি ব্যবহার করে ট্যাংকার ট্র্যাফিক কমেছে ১৮ শতাংশ। শস্য ও কয়লাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজের ট্রানজিট কমেছে ৬ শতাংশ। এছাড়া গ্যাস পরিবহন স্থবির হয়ে পড়েছে।
সামগ্রিকভাবে প্রতি বছর বিশ্ব বাণিজ্যের ১২-১৫ শতাংশ বা ২০ হাজার জাহাজ লোহিত সাগর দিয়ে পারাপার হয়। সমুদ্রপথটি ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছে।
অবশ্য ইউএনসিটিএডি লোহিত সাগর প্রসঙ্গে বাণিজ্যপথের অন্য সমস্যাগুলোও তুলে ধরেছে। যেমন দুই বছর আগে ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ শুরুর পর কৃষ্ণ সাগরকেন্দ্রিক ট্রানজিট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য সরবরাহ কমিয়ে দেয়। যার প্রভাব পড়ে ভোক্তা পর্যায়েও। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় এ রুটে কিছু পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করলেও এক পর্যায়ে তা বন্ধ হয়ে যায়।
মনুষ্যসৃষ্ট বাধার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ঘটনাও তুলে ধরেছে ইউএনসিটিএডি। মধ্য আমেরিকায় খরার কারণে পানামা খালে পানির স্তর নেমে গেছে। অপর্যাপ্ত পানিপ্রবাহের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ রুটে মালবাহী জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ট্রাফিকের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
ইউএনসিটিএডি সতর্ক করে জানিয়েছে, এভাবে প্রধান বাণিজ্য রুটে দীর্ঘায়িত ব্যাঘাত বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করবে। ফলে পণ্য সরবরাহ বিলম্বিত হবে। ব্যয় বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য মূল্যস্ফীতির আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত লোহিত সাগরের দক্ষিণাঞ্চল ও এডেন উপসাগরের মধ্যে চলাচলকারী কয়েক ডজন বাণিজ্যিক জাহাজ হামলার শিকার হয়েছে। মূলত গাজায় হামলা ও ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করায় এসব হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি। এসব হামলার কারণে প্রধান শিপিং লাইনগুলো প্রায় একযোগে লোহিত সাগর এড়িয়ে চলার ঘোষণা দেয়। এরপর সমুদ্রের পাশাপাশি ইয়েমেনে হুথি স্থাপনায় হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যৌথ বাহিনী। কিন্তু তাতেও আশঙ্কামুক্ত করা যায়নি অন্যতম এ বাণিজ্যপথকে।
অর্থসংবাদ/এমআই
 
                         
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                