দাড়ি রাখার সময় কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে দাড়ি রাখলে ত্বকের কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: ব্রণ, খুশকি ইত্যাদি। এ ধরনের সমস্যা এড়ানোর জন্যও বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
দাড়িতে খুব সহজে ধুলোময়লা ও ব্যাকটেরিয়া আটকাতে পারে, যা আস্তে আস্তে ত্বকের রোমকূপ বন্ধ করে দেয়। এতে ব্রণের মতো সমস্যা বেশি হয়। এ জন্য সবার আগে দাড়ির অংশের মুখমণ্ডল এক্সফোলিয়েট করতে হবে। এতে দাড়ির নিচের মৃত কোষ দূর হবে এবং ব্রণ প্রতিরোধ হবে। কয়েকভাবেই এক্সফোলিয়েট করা যায়। সবচেয়ে সহজ উপায় হলো গোসলের আগে ভালো মানের ছোট ব্রিসেলের বিয়ার্ড্র ব্রাশ দিয়ে দাড়ি আঁচড়ানো।
এ ছাড়া প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এক্সফোলিয়েটরও ব্যবহার করা যায়। এটি বানাতে লাগবে এক কাপ নারকেল তেল, দেড় কাপ চিনি, এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ মধু। সব একসঙ্গে মিশিয়ে দাড়ির নিচের ত্বকে ভালো করে সার্কুলার মোশনে ঘষে ঘষে লাগিয়ে কয়েক মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ব্যবহারে আগে অবশ্যই কুসুম গরম পানি দিয়ে দাড়ি হালকা করে ভিজিয়ে নিতে হবে। আর সপ্তাহে দুদিনের বেশি এক্সফোলিয়েট করা যাবে না। এতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে।
ভালো ক্লিনজার দিয়ে দাড়ি পরিষ্কার করতে হবে। প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ এবং ল্যাকটিক অ্যাসিডযুক্ত ক্লিনজার দাড়ির জন্য ভালো। সপ্তাহে দু-তিন করলেই যথেষ্ট।
দাড়ির জন্য আলাদা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। কারণ, মুখের ওই অংশ আর দাড়িবিহীন অংশের ত্বকে পার্থক্য দেখা দেয়। বাজারে এখন অনেক ধরনের বিয়ার্ড অয়েল, বাম বা ক্রিম কিনতে পাওয়া যায়।
চাইলে ঘরেই মাত্র কয়েকটি উপাদান দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন বিয়ার্ড অয়েল। এ জন্য দরকার হবে চার টেবিল চামচ জলপাই তেল, চার টেবিল চামচ নারকেল তেল, চার টেবিল চামচ আমন্ড তেল এবং চার-পাঁচ ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল। এসেনশিয়াল অয়েলের ভেতর টি ট্রি অয়েল, ইউক্যালিপটাস অয়েল বা লেমন অয়েল দেওয়া যেতে পারে। এসেনশিয়াল অয়েল না দিলেও কোনো সমস্যা নেই। সব কটি উপাদান একসঙ্গে মিশালেই তৈরি হবে ঘরোয়া বিয়ার্ড অয়েল। এই তেল আর্দ্রতা বাড়ানোর পাশাপাশি দাড়িতে পুষ্টি জোগায়। এই তেলের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেশন উপাদান ত্বকের নানা রকমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। দাড়ি ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে এবং রাতে ঘুমানোর আগে এই তেল লাগাতে হবে।
মুখত্বকের পুষ্টি জোগাতে আর সৌন্দর্য ধরে রাখতে কত রকমের মাস্ক যে ব্যবহার করা হয়, তার ইয়ত্তা নেই। তেমনি দাড়ির জন্যও মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। সপ্তাহে অন্তত এক দিন দাড়িতে ঘরোয়া মাস্ক লাগাতে পারেন। এই মাস্ক বানাতে লাগবে এক টেবিল চামচ নারকেল তেল, এক টেবিল চামচ আমন্ড তেল, এক টেবিল চামচ ঘন দুধ বা দুধের ক্রিম এবং দুই টেবিল চামচ মধু। সব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে চুলায় খুব সাবধানে গরম করে নিতে হবে। মিশ্রণটি কুসুম গরম অবস্থায় দাড়ির এবং এর নিচের ত্বকে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মাস্ক বাড়তি পুষ্টি জুগিয়ে দাড়িকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও নরম করবে।
যত্নের অভাবে খুশকি হতে পারে দাড়িতেও! এই খুশকিকে বলে বিয়ার্ড্রাফ। এটি প্রতিরোধ করতে অবশ্যই নিয়মমাফিক এক্সফোলিয়েট, ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজ করতে হবে। আর যদি বিয়ার্ড্রাফ হয়ে যায়, তাহলে দয়া করে না জেনেবুঝে চুলের খুশকিনাশক শ্যাম্পু লাগাতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হবে। কারণ, মাথার ত্বক আর মুখের ত্বকের অনেক পার্থক্য আছে। শ্যাম্পু লাগাতে হলে টক্সিনফ্রি মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া ঘরে তৈরি অ্যান্টি-বিয়ার্ড্রাফ মাস্ক লাগাতে পারেন। চার টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বা লেবুর রসের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে দাড়ির নিচের ত্বকে লাগান। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আর লেবুর রসের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান খুশকিনাশক হিসেবে অনেক কার্যকর।
পরিশেষে সুন্দর ও আকর্ষণীয় দাড়ির জন্য খাদ্যাভ্যাসের দিকেও নজর দিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, বিশেষ করে ভিটামিন বি৫, বি৬ এবং বি৯ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। চর্বিযুক্ত মাংস, বাদাম, ডিমের কুসুম, দুধ, সবুজ শাক দাড়ির সুস্থতা বজায় রাখে। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আর অবশ্যই ধূমপান এবং মদ এড়িয়ে চলতে হবে।