গত কয়েক বছরে বিদেশী বিনিয়োগের অন্যতম বড় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। বিশেষ করে দেশটির দুবাইয়ে প্রচুর বিদেশী ব্যবসায়ী নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আসছেন। আমিরাত সরকারও কর, ভিসা ও লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে তাদের। এবার দেশটিতে বিদেশী বিনিয়োগের প্রবাহ আরো গতিশীল করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে আমিরাত সরকার। চালু হতে যাচ্ছে বিদেশীদের জন্য নতুন দুটি বিজনেস লাইসেন্স। এর একটি হলো— ১০ বছর মেয়াদি গোল্ডেন লাইসেন্স, অন্যটি পাঁচ বছর মেয়াদি সিলভার লাইসেন্স।
শিল্প বিশ্লেষক ও শীর্ষ নির্বাহীরা বলছেন, প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক লাইসেন্সগুলো চালু হলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আস্থা জাগিয়ে তুলতে পারবে ইউএই। ব্যবসায়িক উদ্যোগ আগের চেয়ে সহজ হওয়ায় কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন— এমন ব্যবসায়ীদের কাছে আকর্ষণ আরো বাড়বে।
গবেষণা ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান জায়ে ক্যাপিটাল মার্কেটসের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা নাঈম আসলাম জানান, আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য লাইসেন্স উন্মুক্তের বিষয়টি বৈশ্বিকভাবে ভালো সংকেত। আমিরাতকে ব্যবসার জন্য প্রাথমিক আবাস হিসেবে নিতে চাওয়া ব্যবসায়ীদের জন্য এটি ভালো বার্তা।
সম্প্রতি ইউএইর অর্থনীতিবিষয়ক এক বৈঠকে গোল্ডেন ও সিলভার লাইসেন্সের পরিকল্পনার বিস্তারিত উঠে এসেছিল। ওই বৈঠকে সভাপতি করেন দেশটির অর্থমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন তাউক। এটি ছিল চলতি বছরে ইকোনমিক ইন্টিগ্রেশন কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক।
নতুন এ পরিকল্পনার প্রস্তাব সরকারি এক বিবৃতিতেও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, বিজনেস লাইসেন্সের একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। এ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে দেশের রাজস্ব বাড়বে, ব্যবসায়িক কার্যক্রম উদ্দীপিত হবে এবং ইউএইর অর্থনীতিতে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি বাড়বে।
এ বিষয়ে নেতৃত্বস্থানীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সিড গ্রুপের প্রধান নির্বাহী হিশাম আল গুর্গ বলেন, ‘আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির অর্থনীতির জন্য নতুন এ পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি প্রস্তাবিত দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক লাইসেন্স কার্যকর হয়, তবে এটি শুধু আমিরাতের ব্যবসার আস্থা বাড়াবে না বরং বিশ্বজুড়ে স্টার্টআপ উদ্যোগগুলোর ক্ষমতায়ন ঘটাবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের জন্য নতুন স্থায়ী ঘাঁটি হবে।’
সিড গ্রুপ বৈশ্বিক স্টার্ট-আপগুলোর বিকাশে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি ইউএইর প্রধান আকর্ষণ দুবাই ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নিজেদের ব্যবসা প্রসারিত করতে ইচ্ছুক। প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, ফিনটেক, পর্যটন ও আতিথেয়তার মতো বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছে সিড গ্রুপ। বর্তমানে সিড গ্রুপের ছত্রছায়ায় বিনিয়োগ বা কৌশলগত অংশীদারত্বের মাধ্যমে শতাধিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
কয়েক বছর ধরে জ্বালানি তেল-বহির্ভূত খাতে অর্থনীতি সম্প্রসারণে বিভিন্ন নীতি ও আইন বাস্তবায়ন করেছে ইউএই। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দপ্তরসহ অফশোর কার্যক্রমের জন্য ইউএইর শহরগুলোর এখন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। করস্বর্গ হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে দুবাই ও আবুধাবির মতো শহরগুলো। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা চালুর কারণে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি।
প্রস্তাবিত ব্যবসায়িক লাইসেন্স এসব কর্মকাণ্ড আরো বাড়াবে বলে মন্তব্য করেন দুবাইয়ের বিদ্যুচ্চালিত বাইক প্রস্তুতকারক ওয়ান মোটর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী অ্যাডাম রিগওয়ে। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের লাইসেন্সের বাস্তবায়ন আমাদের উপস্থিতিকে আরো সহজ করবে, প্রশাসনের কাজ কমিয়ে দেবে ও ব্যবসায় আরো দক্ষতা তৈরি করবে।’
সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০৩১ সালের মধ্যে ১৫ হাজার কোটি ডলার বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বৈচিত্র্যকরণ কৌশলের অংশ হিসেবে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে দেশটি। পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরে ইউএইর অর্থনীতি ৫ শতাংশ প্রসারিত হতে পারে। এতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকবে জ্বালানি তেল-বহির্ভূত খাতের।
 
                         
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                