ডব্লিউএসএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে সংগঠনভুক্ত ৬৪ দেশে সব মিলিয়ে ১৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদন কমেছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় ইস্পাত উৎপাদনে রীতিমতো ধস নেমেছে। তবে এশিয়ায় শিল্প ধাতুটির উৎপাদনে সামান্য প্রবৃদ্ধি বজায় ছিল।
চীন, ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোয় জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে সব মিলিয়ে ১০০ কোটি ১৭ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ। এক বছরের ব্যবধানে এশিয়ার দেশগুলোয় শিল্প ধাতুটির উৎপাদন বেড়েছে দশমিক ২ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ কমে সাকল্যে ৯ কোটি ৯৪ লাখ টনে নেমে এসেছে।
একইভাবে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় সম্মিলিতভাবে ৭ কোটি ৪০ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ২ শতাংশ কম। এ সময় সিআইএসভুক্ত দেশগুলোয় শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৭ কোটি ৪৩ লাখ টনে নেমে এসেছে।
তবে করোনা মহামারীর জের ধরে বছরের প্রথম নয় মাসে অপরিশোধিত ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমলেও মাসভিত্তিক হিসাবে সেপ্টেম্বরে বিশ্বজুড়ে শিল্প ধাতুটির উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির তথ্য দিয়েছে ডব্লিউএসএ। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্বজুড়ে ১৫ কোটি ৬৪ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ মাসভিত্তিক রেকর্ড।
গত জানুয়ারিতে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ১২ লাখ টন। করোনা মহামারীর জের ধরে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদন কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ও ১৪ কোটি ৭১ লাখ টনে। এপ্রিলে বিশ্বজুড়ে ১৩ কোটি ৬৫ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ। চলতি বছর এটাই ইস্পাতের সর্বনিম্ন মাসভিত্তিক উৎপাদনের রেকর্ড।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টনে। জুনে ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৮৩ লাখ টন। জুলাইয়ে বিশ্বজুড়ে ১৫ কোটি ২৭ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। আর আগস্টে শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদন আরো বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৬২ লাখ টনে।
অর্থাৎ বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন বছরের শুরুর সময়ের তুলনায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। প্রতি মাসেই একটু একটু করে বাড়ছে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন। তবে তা এখনো আগের বছরের একই সময়ের পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। মূলত এ কারণে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বাড়লেও বছরের প্রথম নয় মাসে অপরিশোধিত ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদনে মন্দা ভাব বজায় রয়েছে।
ডব্লিউএসএর সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ চীনে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ২৬ লাখ টনে, যা ২০১৯ সালের একই মাসের তুলনায় ১০ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। এ সময় বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ ভারতে সব মিলিয়ে ৮৫ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে ধাতুটির উৎপাদন কমেছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাপানে শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬৫ লাখ টন। দেশটিতে এক বছরের ব্যবধানে ইস্পাত উৎপাদন ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ায় শিল্প ধাতুটির উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৫৮ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সব মিলিয়ে ৫৭ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ কম। এ সময় তুরস্কে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেড়ে ৩২ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে ব্রাজিলে উৎপাদন হয়েছে ২৬ লাখ টন ইস্পাত, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
এদিকে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় ইস্পাত উৎপাদনে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। আগস্টে জার্মানিতে উৎপাদন হয়েছে ৩০ লাখ টন ইস্পাত, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক৭ শতাংশ কম। ইতালিতে গত মাসে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ১৮ লাখ টনে নেমেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সে শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ টনে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ১ শতাংশ কম। অন্যদিকে স্পেনে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৭ শতাংশ কমে গত মাসে ৯ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে।