প্রসঙ্গত, গত বছরের শেষ দিকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন সেলিম প্রধান। ১২ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্তকালে এরই মধ্যে সেলিম প্রধানের বাংলাদেশের প্রায় অর্ধশত ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া দেশের ৭৬টি প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে তার আয়কর নথি।
সেলিম প্রধানের থাইল্যান্ডে প্রধান গ্লোবাল ট্রেডিং, এশিয়া ইউনাইটেড এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড, তমা হোম পাতায়া কোম্পানি লিমিটেডসহ মোট সাতটি কোম্পানির রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক। এছাড়া ব্যাংকক ব্যাংক ও দ্য সায়েম কমার্শিয়াল ব্যাংকে তার ২০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ লেনদেনেরও তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
দুদকের সংগৃহীত তথ্য বলছে, মো. আশিক আহমেদ ও এসএস হোসাইন নামের দুই বাংলাদেশী থাইল্যান্ডে সেলিম প্রধানের বিভিন্ন কোম্পানিতে পার্টনার হিসেবে যুক্ত ছিলেন। সেলিম প্রধানের ব্যাংক হিসাব ও কোম্পানির রেকর্ডপত্র জব্দের জন্য এরই মধ্যে থাইল্যান্ডে এমএলএআর পাঠিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, সেলিম প্রধান সংঘবদ্ধভাবে অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন। পি২৪-গেমিং, টি-২১ ইনোভেশন, এস-৭ এন্টারটেইনমেন্ট ইত্যাদি নামে অনলাইন বেটিং তথা জুয়ার সাইট গড়ে তুলেছিলেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে এসব বেটিং সাইটের প্রচার চালানো হতো। এছাড়া বিভিন্ন ভিডিও বার্তায় গেম খেলার নিয়ম, পদ্ধতি ও প্রলোভনমূলক কথাবার্তা বলে এসব সাইটে বেটিং চালাতে বিভিন্ন পেশার লোকদের উদ্বুদ্ধ করা হতো। সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে আয়কৃত প্রায় ১৩ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
দেশে সেলিম প্রধানের ব্যাংক লেনদেন বিশ্লেষণ করে তার একটি সেভিংস অ্যাকাউন্টেই ১১ মাসে ৬১ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক। এ টাকার কোনো উৎস খুঁজে পায়নি কমিশন।
শিগগিরই তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে বলে জানিয়েছে দুদক। তদন্ত প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য বলছে, নারায়ণগঞ্জে জন্মগ্রহণ করলেও সেলিম প্রধানের বেড়ে ওঠা ঢাকার মোহাম্মদপুরে। খুব অল্প বয়সে জাপান গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে একটানা নয় বছর থাকার পর ব্যবসায়িক ঝামেলার কারণে তাকে জাপান ছাড়তে হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান তিনি। তার অনলাইন ক্যাসিনোর হাতেখড়িও সেখানেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বেশিদিন টিকতে পারেননি তিনি। চুরির অপরাধে সেখানে গ্রেফতার হন সেলিম প্রধান। পরে ছাড়া পেয়ে আবার জালিয়াতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে ২০০৫ সালে মার্কিন আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে সেলিম প্রধানের ক্যাসিনো খেলার ও সেখান থেকে কয়েক কোটি টাকার ক্যাসিনো চিপস এবং ক্যাসিনো যন্ত্রপাতি ক্রয়ের তথ্য পেয়েছে দুদক। লাস ভেগাসের মন্টি কার্লো রিসোর্টে নিয়মিত ক্যাসিনো খেলার ও সেখান থেকে তার ক্যাসিনো চিপস ক্রয়ের রেকর্ডপত্রও দুদকের হাতে এসেছে। এছাড়া জেপি মরগান চেজ ব্যাংকেও তার অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
বাংলাদেশে মূলত কোরীয় এক ব্যবসায়িক পার্টনারের মাধ্যমে সেলিম প্রধান অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি গুলশানে প্রধান স্পা সেন্টার, প্রধান টেক্সটাইলসহ বেশকিছু ব্যবসাও শুরু করেছিলেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, মূলত ক্যাসিনো ব্যবসাকে আড়াল করতেই অন্য ব্যবসার অবতারণা করেন সেলিম প্রধান।