গত সপ্তাহে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এ বৈঠকে কমিটির সদস্যরা সরকারের পরবর্তী পঞ্চবার্ষিকী ও ১৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেছেন। এ সময় জিনপিং আগামী ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতিকে কোন অবস্থানে দেখতে চান, সে পরিকল্পনা তুলে ধরেন। প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য ২০৩৫ সাল নাগাদ চীনের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ বর্তমানের দ্বিগুণ করা এবং মাথাপিছু জিডিপি ‘মধ্যম সারির উন্নত’ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া।
২০১৫ সালে চীন যখন সর্বশেষ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিল, তখন সেন্ট্রাল কমিটিতে দেয়া শি জিনপিংয়ের বক্তব্যে গড় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা উঠে এসেছিল। সে সময় পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদে গড়ে অন্তত ৬ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছিলেন জিনপিং।
কিন্তু এবার জিনপিং ও তার কর্মকর্তারা প্রবৃদ্ধির কোনো সংখ্যাগত লক্ষ্যমাত্রার কথা উল্লেখ করেননি। সেন্ট্রাল কমিটি জানিয়েছে, তারা পাঁচ বছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে কাজ করছে। তাই এবার চীনের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা জানার সুযোগ এখনো হয়নি। আগামী বছরের মার্চে চীনের পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিকল্পনাটি গৃহীত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে সময় জিনপিং প্রশাসনের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আরো সুস্পষ্টভাবে জানা যাবে। আপাতত অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের সামনে কেবল একটাই সূত্র রয়েছে এ সম্পর্কে ধারণা লাভের। সেটি হলো, ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশের জিডিপি দ্বিগুণ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা।
চীনের সরকারি কর্মকর্তারা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না জানালেও রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জিনপিং প্রশাসন বছরে গড়ে প্রায় ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। অর্থনীতিবিদরাও প্রায় একই কথা বলছেন। তাদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা জিনপিং করছেন, তা বাস্তবায়ন করতে হলে দেশটিকে গড়ে প্রতি বছর ৪ দশমিক ৭ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
লন্ডনভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকস লিমিটেডের জুলিয়ান ইভানস-প্রিচার্ড ও তার দল এক নোটে লিখেছেন, ‘আগামী ১৫ বছর প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশের ওপরে রাখা হবে চীনের জন্য উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা। কারণ আগামী দশকে বহির্বিশ্বের পরিবেশ আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে এবং মূলধনের বিপরীতে রিটার্ন কমে আসবে।’
এদিকে জেপি মরগান চেজ অ্যান্ড কোম্পানির হংকং কার্যালয়ের চীনবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হেইবিন ঝু বলেছেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টি এখন পর্যন্ত যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে আগামী ১৫ বছরে চীনকে প্রতি বছর গড়ে ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে আগামী বছর প্রবৃদ্ধির হার একটু বেশি (৮ দশমিক ৭ শতাংশ) থাকতে হবে, কারণ চলতি বছর প্রবৃদ্ধি কম থাকবে। ২০২২-২৫ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির গড় হার হতে হবে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া ২০২৬-২০৩০ সাল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ও ২০৩১-৩৫ সাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭ শতাংশ গড় হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে দেশটিকে।’
চীনের পটেনশিয়াল গ্রোথের (একটি দেশ মধ্যম মেয়াদে যে হারে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম) পরিসংখ্যান বলছে, দেশটির অর্থনীতি ম্যাচুরিটির পর্যায়ে চলে এসেছে। সুতরাং আগামী ১৫ বছরে ৪ দশমিক ৭ থেকে ৫ শতাংশ গড় হারে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাটা উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রাই বলতে হবে। চীন সরকারের বর্তমান লক্ষ্যমাত্রা হলো চলতি বছরের মধ্যে জিডিপি ও অর্থনীতির আকার ২০১০ সালের দ্বিগুণ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। ২০৩৫ সাল নাগাদ তারও দ্বিগুণ জিডিপির অবস্থানে পৌঁছতে হলে দেশটিকে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে—এটা নিশ্চিতভাবেই বলে দেয়া যায়।
সূত্র ব্লুমবার্গ।