১. কীভাবে মার্কিন অর্থনীতি রক্ষা করবেন বাইডেন?
কয়েক মাস ধরে অর্থনীতিবিদেরা বলে আসছেন, করোনাভাইরাসের কারণে ভেঙে পড়া অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য ত্রাণ তহবিলের আকার বাড়াতে। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা যে ব্যয় পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন তা প্রত্যাখ্যান করে রিপাবলিকানরা। ফলে আলোচনায় একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এখন আবার রিপাবলিকানরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে নতুন প্রেসিডেন্ট অফিসে প্রবেশের আগে তাঁরা একটি চুক্তি করবেন। এখন প্রশ্ন হলো ডেমোক্র্যাটরা যা চান তার চেয়ে যদি তহবিল কম হয় এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিপর্যয় শুরু হয়, তবে মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত বাইডেন সরকার কতটুকু বাড়াতে চাইবে? নির্বাচনী প্রচারেই বাইডেন শিক্ষার্থীদের ঋণ মওকুফ, অবসর ভাতা ভোগীদের সামাজিক সুরক্ষা চেক বৃদ্ধি এবং ছোট ব্যবসায়ের জন্য অর্থ সরবরাহ করার পরিকল্পনা সমর্থন করেছেন। এ ছাড়া বাইডেনের অন্যতম উচ্চাভিলাষী প্রস্তাব হলো, পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পেছনে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ। মার্কিন পণ্য ক্রয়ের জন্যও তিনি ৪০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। এ–সংক্রান্ত একটি আইনের (আমেরিকান পণ্য ক্রয় করুন বা 'বাই আমেরিকান') কথাও বলছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে তার কত বড় তহবিল লাগবে। এদিকে রিপাবলিকানরা শেষ মুহূর্তে হয়তো এই সব পরিকল্পনা প্রতিরোধে কাজ করবেন। পরে কীভাবে তা সামাল দেবে বাইডেন সরকার।
২. তিনি কীভাবে বৈষম্যের সমাধান করবেন?
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আয় বৈষম্য ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে। উদারপন্থীরা ধনীদের ওপর বেশি করের চাপ দেওয়ার পক্ষে। নানা সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই প্রস্তাবে জনগণের মধ্যে বহুল সমর্থন রয়েছে। প্রচারের সময় বাইডেনও ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত ২০১৭ সালের ধনীদের ওপর কর কমানোর অংশগুলো পাল্টানোর আহ্বান জানান। অন্যান্য পরিবর্তনগুলোর মধ্যে করপোরেশনগুলোতে হার ২১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৮ শতাংশ করার প্রতিশ্রুতিও দেন। যার ফলে এক দশকে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার বেশি রাজস্ব আয় সম্ভব হবে, যা দিয়ে করোনার কারণে যে সরকারি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে তা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে বাইডেনের এই কর বাড়ানোর যেকোনো প্রচেষ্টা রিপাবলিকান এবং ব্যবসায়ী গ্রুপের তীব্র বিরোধিতার মুখোমুখি হবে। কারণ রিপাবলিকান ও ব্যবসায়ীরা বারবারই বলে আসছেন যে উচ্চ কর অর্থনীতির ক্ষতি করবে। অর্থনীতির এই সংকটজনক অবস্থায় বাইডেন কি এই চাপ সামলাতে পারবেন?—এমন প্রশ্ন এখন উঠে আসছে।
৩. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে কি রাজি হবেন মার্কিন নাগরিকেরা?
নির্বাচনী প্রচারের শুরুতে যখন বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম পরিকল্পনাটি উন্মোচন করেন, তা হতাশ করে পরিবেশবাদীদের। তবে এই বছরে প্রচ্ছন্ন প্রস্তাব নিয়ে ফিরে এসেছেন তিনি। তাঁর কয়েকজন সাবেক সমালোচকের সাহায্য নিয়ে নতুন প্রস্তাব তৈরি করেছেন তিনি, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে প্রস্তাবিত সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
বাইডেনের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি গবেষণাতে ৪০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, গাড়ি দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করা, করপোরেট দূষণকারীদের ওপর ক্র্যাকিং করা, ৫ লাখ বৈদ্যুতিক যানবাহনের চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করা এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে কার্বন দূষণ দূরীকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানরা জনগণকে হুঁশিয়ারি করেন। তাঁরা বলতে চান এই পরিকল্পনা মার্কিন অর্থনীতিকে ‘দাফন’ করে দেবে। সীমিতভাবেও যদি বাইডেন এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে পারেন তাহলেও তা ট্রাম্পের সময়ের চেয়ে একেবারে ঘুরে দাঁড়াবে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প পরিবেশ রক্ষাকারী বেশ কিছু বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে জ্বালানি কেন্দ্র ও যানবাহনের কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমনের সীমা। একই সঙ্গে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে করা আন্তর্জাতিক প্যারিস চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তাঁর যুক্তি হলো এই চুক্তি থেকে তাঁর দেশ লাভবান হচ্ছে না, বরং অন্য দেশগুলো এ থেকে সুবিধা নিচ্ছে। এখন দেখার বিষয় বাইডেন কোন প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দেন।
৪. ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ কি শেষ করবেন বাইডেন?
বাণিজ্য ইস্যুতে ট্রাম্প চীনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ছিলেন মেয়াদের পুরো চার বছর। বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের পণ্যকে রক্ষা করতে তিনি অনেক নীতিমালাও গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে বাইডেন বিশ্ব মঞ্চে মিত্র নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার বিষয়ে পুনরায় জোর দেবেন, তবে ট্রাম্পের চেয়ে কতটা পার্থক্য থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
কারণ নির্বাচনী প্রচারের সময়ই দেখা গেছে বাণিজ্যের ব্যাপারে বাইডেন এক জটিল ও অনিশ্চিত অবস্থানে আছেন। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের জন্য একদিকে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করছেন আবার অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট এই প্রার্থীর চীনের ব্যাপারে নমনীয় ভূমিকাও দেখাতে চান না। আবার তিনি যে খুব বেশি মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে তা–ও প্রকাশ করতে চান না। আর এসব কারণেই তিনি 'যুক্তরাষ্ট্রপন্থী এক বাণিজ্য কৌশলের' প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মিত্র জোট গঠন করে চীনের বিষয়ে ‘আক্রমণাত্মক’ পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তবে এরপরও কেউ কেউ আশা করছেন, চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক অপসারণ করবেন বাইডেন।
৫. তিনি কি বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে ভাঙন ধরাবেন?
মার্কিন টেক জায়ান্টদের কার্যকলাপ বিশ্বজুড়ে বড় তদন্তের অধীনে রয়েছে। তবে নির্বাচনী প্রচারে কোনো প্রযুক্তি নীতি প্ল্যাটফর্ম বিশদভাবে বর্ণনা করেননি বাইডেন। বিষয়টি বিস্তারিত বুঝিয়ে বলা যায়। সিডিএর সেকশন ২৩০-এর মাধ্যমে কনটেন্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু আইনগত সুরক্ষা পেয়ে থাকে ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো। এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ানির্ভর কোনো কম্পিউটার সেবার ক্ষেত্রে কোনো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এমন কোনো কনটেন্ট বা তথ্যের প্রকাশকারী হিসেবে বিবেচিত হবে না, যা অন্য কোনো ইনফরমেশন কনটেন্ট প্রোভাইডার সরবরাহ করেছে।’ অর্থাৎ তৃতীয় পার্টির সরবরাহকৃত কোনো তথ্য বা কনটেন্টের দায় সেবাদানকারী কোম্পানির ওপর বর্তাবে না। বাইডেন শুরু থেকেই প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিষয়ে নমনীয়।
এর আগে তিনি জানান যে তিনি মার্কিন আইনটি প্রত্যাহারকে সমর্থন করেন, যা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা সামগ্রীর দায়বদ্ধতা থেকে রক্ষা করে। সমালোচকেরা মনে করেন, নির্বাচনে সিলিকন ভ্যালিতে ব্যাপক সমর্থন পেয়ে তিনি এবং তাঁর সহসভাপতি কমলা হ্যারিস এই বিষয়ে অস্বাভাবিকভাবে চুপচাপ ছিলেন। এখন দেখার বিষয় বাইডেন কি এই প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ করেন নাকি এ বিষয়টি থেকে পিছিয়ে আসেন।