গতকাল সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) আয়োজনে দুদিনের ‘পঞ্চম বার্ষিক সানেম অ্যানুয়াল ইকোনমিস্ট কনফারেন্স-২০২০’ সম্মেলন রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে। এ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিদরা অংশ নিচ্ছেন। এতে দক্ষিণ এশিয়ার ২৬ জন গবেষক তাদের গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করছেন। এবার সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠান’। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সানেমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, গত দুই দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের যেকোনো সূচকের বিচারে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। সমপর্যায়ের অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছে, তা বিশ্বের কাছে বিস্ময়। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের আন্তর্জাতিক মানের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত নিচে। এর পরও প্রবৃদ্ধির দিক থেকে এত দূর এগিয়ে আছে বাংলাদেশের এটা একটা বিস্ময়। ভবিষ্যতে অর্থনীতির সঙ্গে সুশাসনের যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটি সমন্বয় করে বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে এমন প্রশ্ন থেকেই যায়।
তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তা কৃষি খাতের বাইরে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিম্নমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে, বিদেশে স্বল্পশিক্ষিত, অল্প দক্ষ শ্রমিক পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে এবং নারী শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করে তৈরি পোশাক রফতানির মাধ্যামে। উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যেতে হলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করতে হবে। শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমানে দেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড চলছে। তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। সুশাসনের সূচক বাড়াতে হবে, জমি দখল রোধ ও দুর্নীতি, দূষণ মুক্ত করতে হবে। এসব করতে হলে ব্যক্তি নৈতিকতা বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যাংকের টাকা লুট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে উন্নয়ন টেকসই ও বেগবান করা যাবে না।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে চাইলে অবশ্যই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে ও প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজনীতিবিদরা যেসব অঙ্গীকার করেন তার অধিকাংশ বাস্তবায়ন হয় না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যারা কর দিতে সক্ষম তারা কর দেন না। বড় দলের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় থাকার কারণে প্রশাসনও কিছু করতে পারে না। এজন্য সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন খুব দরকার।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, ভ্যাট আইন কার্যকর করার জন্য কাঠামোগত যে সংস্কার প্রয়োজন, সেটা ঠিকভাবে করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে যথাযথ কর গ্রহণও নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে কর কাঠামো, এনবিআর কর্মীদের যে ধরনের দক্ষতা থাকা দরকার, সেই ধরনের দক্ষতা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি দুর্নীতি সমস্যা তো রয়েছেই। এ বিষয়গুলো যদি সমন্বয় করা না হয়, তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন সম্ভব হবে না। আমাদের অনেক আইন আছে কাগজে-কলমে, বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই।
সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশনে অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ ও গুণগত উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা ছাড়াই ১০০ বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ১০ বছরের মধ্যে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক পরিবেশ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষার মান পরিবর্তন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ১০০ বছরের কর্মপরিকল্পনা করে লাভ কী? অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দরকার।
আজ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের ভেনু গুলশানের স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টার।