তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই নালিশ পাই, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প যেগুলো তারা যথেষ্ট পরিমাণে ঋণ পাচ্ছে না। ঘটনা সত্য। কিন্তু তারাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেশি। আমাদের যেখানে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা দরকার, যারা দারিদ্রের ওপর বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে; প্রণোদনা প্যাকেজ কিন্তু তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমানে যাচ্ছে না।
আজ বুধবার (১১ নভেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিস (বিআইআইএস) আয়োজিত ‘এফডিআই এবং ম্যাক্রো ইকোনোমিক ইন বাংলাদেশ ডিউরিং কোভিড-১৯’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মশিউর রহমান বলেন, ব্যাংকের দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। ব্যাংকের যে লোকগুলো আছে তাদের হয়তো কিছুটা অনাগ্রহ আছে। সেগুলো দূর করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। ঋণ না দেওয়ার কারণ হলো ছোট শিল্প উদ্যোক্তাকে ব্যাংক যথেষ্টভাবে চেনে না। ছোট একটি ঋণ দেওয়ার যে ব্যয় তার তুলনায় বড় ঋণ দেওয়ার ব্যয় অনেক কম। এগুলো জেনেই বড় ঋণটা আগে দিয়েছে। তার মধ্যে অনেক খেলাপিও আছে।
তিনি বলেন, খেলাপিদের সুযোগ দেওয়ার ফলে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। যদি আমি দীর্ঘদিন খেলাপি হয়ে টিকে থাকতে পারি, তাহলে বোধহয় আমিও সুযোগ পাবো। রং ইনসেনটিভ সবসময় বিভিন্ন রং দিকে নেয়। পলিসি রেটটা কমানো এটার যথেষ্ট যুক্তি আছে। সিআরআর কমানোরও যথেষ্ট যুক্তি আছে। কারণ টাকা নিয়ে যদি ঋণ না দেন তাহলে সুদ বেশি দিতে হবে। সবগুলোই ঠিক আছে।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, এখানে বোধহয় সরকারের একটা বড় দায়িত্ব আছে। সরকার বা এনজিও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংকারদের সঙ্গে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারে। সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং প্রশংসনীয়। কিন্তু সেই উদ্যোগটা বাস্তবায়ন করার জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা দরকার, সেখানে কিছুটা গ্যাপ রয়েছে। গ্যাপটা হলো বড় উদ্যোক্তারা ব্যাংকের কাছে পরিচিত। সেজন্য ব্যাংক একটু কার্পণ্যের সঙ্গে ছোট উদ্যোক্তাদের কাছে যাচ্ছে। এই কারণটা আরও গভীরভাবে দেখা উচিত। যাতে আরও যথেষ্ট পরিমান টাকা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে যায় এবং টাকা আছে।
তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তবে বেসরকারিখাতে বিনিয়োগ খুব দ্রুত বাড়বে বলে মনে হয় না। কারণ আমাদের প্রধান শিল্প তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার ক্ষমতা নেই মালিকদের। মহামারির সময় শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য সরকারকে টাকা দিতে হয়েছে।
মশিউর রহমান আরও বলেন, বিদেশে যারা চিকিৎসা নিতে যায় তাদের বিদেশে খরচের ওপর একটা ট্যাক্স ধরা উচিত। ভালো চিকিৎসার জন্য অনেকেই বিদেশে যাবে। সেটা ঠিক। কিন্তু তারা দেশে চিকিৎসা নিলে যে ব্যয় করতেন তা দেশেই থাকতো। এজন্য দেশের বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আরও নজরদারি বাড়ানো দরকার। একটি কাঠামোর মধ্যে এনে মনিটরিং করার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, এফডিআই যদি ঋণ করে নেওয়া হয়, তাহলে খেয়াল রাখতে হবে এই ঋণ পরিশোধের জন্য আমাদের বৈদেশিক (রেমিটেন্স এবং এক্সপোর্ট) আয় যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে কিনা। যদি দেখা যায়, কোনো একটা বেঞ্চমার্ক থেকে আমাদের ঋণের পরিমাণ যেভাবে বাড়ছে। আমাদের বিদেশি আয় সে পরিমাণে বাড়ছে কিনা। সেই বিদেশি আয় হিসাব করার সময় দেখতে হবে আমাদের ইমপোর্ট কি পরিমাণে হতো। সেটা নরমালাইজড করা উচিত। এজন্য একটা অপশন সেখানে রাখা দরকার।
তিনি আরও বলেন, এফডিআই বলতে আমি বুঝি বিদেশিরা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করছে। বিনিয়োগের একটা ঝুঁকি নিচ্ছে। বিনিয়োগের যে লাভ তারও একটা অংশ সে পাবে। আর যদি আমি ঋণ নিয়ে করি তাহলে বিনিয়োগ হিসেবে সরাসরি বিবেচনা করা ঠিক হবে না। কারণ সেখানে আমাদের ওপর একটা দায় এসে পড়ছে। কিন্তু সরাসরি যদি বিনিয়োগ করে সে দায় আসছে না।
‘রেমিটেন্স হেলায়-ফেলায় খরচ না করে সংরক্ষণ করা উচিত। কারণ সামনে কি হবে এখনো বলা যাচ্ছে না। শ্রমিকরা কি সবাই দেশে ফিরে আসবে। ভবিষ্যত কি হবে তার ঠিক নেই। তাই রেমিটেন্স হেলায় ফেলায় খরচ না করাই ভালো।’
বিআইআইএস চেয়ারম্যান মো. ফজলুল করিমের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা, বায়রার সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, ইউজিসির সদস্য প্রফেসর দিল আফরোজ, টিএমএসএস নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর হোসনে আরা প্রমুখ।
এফডিআই ও ম্যাক্রো ইকোনোমিক নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইআইএস রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ মাহফুজ কবির। সমপানী বক্তব্য রাখেন বিআইআইএস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. ইমদাদ উল বারী।