চাঁদপুরে আন্তর্জাতিক রিসোর্ট প্রকল্পের কাজ আটকে গেল যে কারণে

চাঁদপুরে আন্তর্জাতিক রিসোর্ট প্রকল্পের কাজ আটকে গেল যে কারণে
জাপানের অর্থায়নে চাঁদপুর জেলার মেঘনার চরে ব্লু রিভার আইল্যান্ড রিসোর্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেডের উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। গত ২০১৯-২০ সালে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পিত এই রিসোর্টে একত্রে ২০ হাজার মানুষ অবকাশ যাপনের সুযোগ পেত। কিন্তু স্থানীয় মন্ত্রীর অসহযোগিতা এবং আমলাদের লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত আটকা পড়ে যায়।

জানা যায়, প্রকল্পটির শুরু থেকেই উদ্যোক্তা মাইনুল ইসলাম দুলন সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। লোকাল কমিউনিকেশন, প্লানিং ও এক্সিকিউশনের দায়িত্বের কিছু অংশ ছিলো তার এবং মনসুর আলম মুন্নার কাঁধে। প্রকল্পের ইনোগারেশন প্রোগ্রামে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যম কর্মী এবং জাপানের বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলো। সেসময় বিনিয়োগকারীরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে তাদের সন্তুষ্টি ও আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় মন্ত্রী ডা. দীপু মনির সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস পান তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশ্বাসের বাস্তব রূপ দেখা যায়নি।

সূত্র জানায়, এই প্রকল্পটির জন্য চাঁদপুর শহরের পাড় ঘেঁষে ৩০-৩৫ বছর পুরোনো ছোট ছোট রিভার আইল্যান্ড বা স্থায়ী চরের ৬০০ একর জমি অধিগ্রহন করতে হতো। শুরুর দিকের কাজে স্থানীয় মন্ত্রী, চাঁদপুরের তৎকালীন মেয়র এবং ডিসির কাছ থেকে তারা ভালোই সহযোগিতা পাচ্ছিলেন উদ্যোক্তারা। এরপর তারা প্রকল্পের চূড়ান্ত রূপরেখা অনুযায়ী একটি প্রস্তাবনা ডিসি অফিসে প্রেরণ করেন। প্রস্তাবনায় তারা তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে ৬০০ একর জমি অধিগ্রহণের অনুরোধ জানায়। প্রকল্প প্রস্তাবনার একটি শর্ত ছিলো রিসোর্টটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে প্রকল্প এলাকার ৬-৭ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোনো ড্রেজিং বা নদী খনন কার্যক্রম যেন না হয়।

তবে এই প্রস্তাবনা প্রেরণের পর থেকেই অকারণে সরকারি প্রশাসনের সহযোগিতা কমে যেতে থাকে। তাদের ফাইল এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ঘুরতে থাকে। অন্যদিকে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সড়ক পরিবহন অধিদপ্তর, নদী রক্ষা কমিশন, বন অধিদপ্তর থেকে শুরু করে টুরিজম বোর্ডসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট জায়গার অনুমোদন সংগ্রহ করে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে ফেলেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যলয় থেকে তাদের ফাইলের আর মুক্তি ঘটে নাই। এক পর্যায়ে নোটিস করে দেখেন যে তাদের ফাইলটি এক জায়গাতেই স্থবির হয়ে পড়ে আছে।

কারণ খুঁজতে গিয়ে উদ্যোক্তারা জানেন, তাদের প্রকল্প এলাকার আশেপাশে তো বটেই এমনকি প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত চরগুলোতেও ডা. দীপু মনির ভাই ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ টিপু, তার পার্টনার বালুখেকো সেলিম এবং ক্ষমতাসীন দলের আর কিছু নেতাকর্মী মিলে সমানে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। ইতিমধ্যেই দুটি চর সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গিয়েছে।

এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে চূড়ান্ত অসহযোগীতার পাওয়ার পর এক পর্যায়ে তারা হাল ছেড়ে দিচ্ছিলেন উদ্যোক্তারা। তবে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র তাদের পৌরসভা এবং জেলা প্রশাসনের কাছে কিছু জমি দিতে চাইলে তারা আবার প্রকল্পের সাম্ভাব্যতা যাচাই করে কাজ শুরু করেন। কিন্তু তাদের সাথে প্রতারণামূলক আচরণ করে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

তারা জানান, জাপানের বিনিয়োগকারীরা কয়েকবার করে এসে প্রকল্পের প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শন করে গেলেও মেয়র আর তাদের কল রিসিভ করেননি। প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরের দিনক্ষণ এগিয়ে আসতে থাকলেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তারা জানেন, মেয়র সেই জমিগুলো তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতে ব্যবহারের জন্য অন্য একটি কোম্পানিকে দিয়ে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে উদ্যোক্তা মাইনুল হাসান দুলন বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগমূলক আচরণে আমরা বেশ হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। এমনকি প্রকল্পটির ব্যাপারে অভিযোগ জানানোর মতো জায়গা বা সাহস কোনোটাই ছিলো না। ডাঙায় নেমে আর যাই হোক কুমিরের সাথে লড়াই করা যায় না।

তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে এ প্রকল্প বাস্তবে রূপ নিবে বলে বিশ্বাস এই উদ্যোক্তার।

এমআই

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

রংপুরে ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, ছড়িয়েছে যেসব জায়গায়
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
চাঁদাবাজির অভিযোগে গণপিটুনি, ইউপি সদস্য নিহত
অবরোধে স্থবির খাগড়াছড়ি, থমথমে গুইমারা
শিশু তায়েবা হত্যাকাণ্ডে চাচিসহ গ্রেপ্তার ৩
অবরোধে থমথমে খাগড়াছড়ি, ১৪৪ ধারা বহাল
খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি
খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধ, বিপাকে পর্যটকরা
বিপৎসীমার ওপরে কাপ্তাই বাঁধের পানি
গাজীপুরে ঝুটের গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট