বেলজিয়ামের শিক্ষার মান উন্নত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। অর্থনীতি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড আইটি, পদার্থ, পলিটিক্যাল সায়েন্স, প্রকৌশল, আইটি, স্বাস্থ্য ও ব্যবসায় শিক্ষা পড়ার জন্য ভালো দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। উচ্চশিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বেলজিয়ামে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক অবস্থান শীর্ষে।
বেলজিয়ামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত ডাচ ভাষায় পড়াশোনা করানো হয়।বেলজিয়ামের প্রধান দুটি ভাষা হলো ফরাসি ও ফ্লেমিশ। এছাড়া অঞ্চল বিশেষে জার্মানি, ফরাসি, ইংরেজি ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বেলজিয়ামের অন্যান্য ভাষাগুলোর মধ্যে আরবি, তুর্কি, কাবিলে, স্পেনীয়, পর্তুগিজ এবং লেৎসেবুর্গেশ ভাষা অন্যতম।বেলজিয়ামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত ডাচ ভাষায় পড়াশোনা করানো হয়।তাই বেলজিয়ামে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হলে ডাচ ভাষার ওপর ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের। অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানে ইংরেজিতে পড়াশোনা করা যায়।
ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে আইইএলটিএস স্কোর ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ থাকতে হয়। তবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ দশমিক ৫ আইইএলটিএস স্কোরও চায়। তবে যেসব শিক্ষার্থীর স্নাতকের মাধ্যম ইংরেজি ছিল, তারা আইইএলটিএস স্কোর ছাড়াই মাস্টার্সে আবেদন করতে পারেন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবেদনের জন্য একাডেমিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৬০ শতাংশ মার্কস থাকা ভালো।
বেলজিয়ামে পড়াশোনার খরচ ইউরোপের অন্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক কম। নন-ইউরোপিয়ান দেশ থেকে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে টিউশন ফি দিতে হয় ৮৫০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ ইউরো পর্যন্ত। তা ছাড়া বিভিন্ন রকমের শিক্ষাবৃত্তির সুযোগও রয়েছে দেশটিতে। থাকা-খাওয়া, অন্যান্যসহ মাসে ৪৫০ থেকে ৬৫০ ইউরো খরচ হবে।পাঁচ বছর থাকার পর কিছু শর্ত মেনে পিআর/স্থায়ীভাবে থাকার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এখানে মডার্ন হিস্ট্রি, ল্যাটিন, গ্রিক, জার্মান, আর্কিওলজি, নরডিক স্টাডিজ, কমিউনিকেশন স্টাডিজ, পলিটিক্যাল সায়েন্স, ল, সোসিওলজি, জিওগ্রাফি, বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, জেনেটিক্স, মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ সায়েন্স, প্যাথলজি, সার্জারি, ডেন্টিস্ট্রি, মাইক্রো বায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি, রেডিওলজি, টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন, আর্কিটেকচার, আরবান প্লানিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইকোনমিক্স, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ফার্মেসি, ভেটেরিনারি, কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রনিক্স, ম্যাথম্যাটিকস, হর্টিকালচার ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাটিসটিকসসহ আরো অনেক বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় ডিগ্রি দিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
বেলজিয়ামের শিক্ষাব্যবস্থা এবং ডিগ্রি খুবই মানসম্পন্ন। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ৫০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭টিই বেলজিয়ামে অবস্থিত। এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা তাত্ত্বিক নয়, গবেষণা ভিত্তিক। এখানে উচ্চশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে আপনি সবকিছু হাতে কলমে শিখতে পারবেন। কৌশল, আইটি, হেলথ ও বিজনেস কোর্সের জন্য দেশটি খুবই ভালো।
ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের মতো বেলজিয়ামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অনার্স মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ে বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। এখানে অনার্স কোর্সের মেয়াদ তিন থেকে চার বছর, মাস্টার্স কোর্স এক থেকে দুই বছর এবং পিএইচডি তিন থেকে চার বছর মেয়াদি হয়ে থাকে। বেলজিয়ামের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরে তিন বার ভর্তির জন্য আবেদন করা যায়। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত একবার, আরেকবার ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে এবং আবার জুলাই এর প্রথম দিকে। উচ্চতর শিক্ষা প্রদানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তরিকার মোটেও অভাব নেই।প্রত্যেক ইউনিভার্সিটির বিশাল লাইব্রেরিতে আছে অসংখ্য দুর্লভ গ্রন্থ। পাঠ্য সহায়ক গ্রন্থেরও অভাব নেই। অর্থাৎ সবদিক দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় স্বয়ংসম্পূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে শিক্ষার্থীরা যেমন লাইব্রেরিতে বসে পড়াশোনা করতে পারে, তেমনি ইচ্ছা করলে ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও লাইব্রেরিটি ব্যবহার করতে পারে। আছে বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনারও সুযোগ। স্নাতক, স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রতি বছরই স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে থাকে।
বেলজিয়ামে পড়াশোনার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি তথ্য ও প্রসপেকটাস চেয়ে আবেদন করলে তারা বিস্তারিত প্রসেসিং প্ল্যান আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবে। সাধারণত একবার আবেদন করা যায়। আবেদন করার জন্য অবশ্যই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ভর্তির তারিখ দেখতে হবে। আবেদন করার জন্য এসএসসি, এইচএসসি এবং অনার্সের সার্টিফিকেট, মোটিভেশনাল লেটার, সিভি, রেফারেন্স লেটার দরকার হয়। শিক্ষা সনদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার কর্তৃক সত্যায়িত করার পর শিক্ষা বোর্ড, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বেলজিয়াম কনস্যুলেট থেকে সত্যায়িত করাতে হবে। এরপর এসব পেপার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা বরাবর ডাকযোগে পাঠাতে হবে। প্রাথমিক আবেদন সাধারণত ই-মেইল করা যায়।
বেলজিয়ামের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের ঠিকানা:
https://www.kuleuven.be/english, http://www.ugent.be/en, https://www.uclouvain.be/en-index.html, http://www.vub.ac.be/en/, http://www.ulb.ac.be/ulb/presentation/uk.html, https://www.topuniversities.com/where-to-study/europe/belgium/guide, https://www.mastersportal.com/articles/555/costs-of-studying-and-living-in-belgium.html, https://www.study.eu/best-universities/belgium
অর্থসংবাদ/এ এইচ আর ১০: ৫০ / ১১: ১৮: ২০২০