আইন অনুযায়ী গ্রুপ অব কোম্পানীর মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও বেআইনিভাবে এস আলম গ্রুপকে ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক যা প্রতিষ্ঠানটির মোট মূলধনের ৪২০ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের মূলধন হিসাবে ৫৭৮ কোটি টাকা প্রাপ্য হলেও তাদের ঋণ দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। আমদানির বিপরীতে বিপুল টাকা ঋণ দেওয়া হলেও তা শোধ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে বছরের পর বছর মেয়াদ বাড়িয়ে কৌশলে নিয়মিত দেখানো হচ্ছে। নতুন করে ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন সদ্য পদত্যাগ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে এখন আর ওপরের চাপ না থাকায় বেআইনি এ সুবিধা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে পুরোটাই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জনতা ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ঋণ নবায়নের অনুমোদন দিলে মোট ঋণ সুবিধা হবে ১০ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মূলধনের যা ৪৫১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। নতুন করে সুবিধার জন্য গত ২৫ জুন জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এই ঋণের মেয়াদ বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতো বিপুল টাকা ঋণ নেওয়া হলেও গ্রাহকের ঋণপত্র দায় সময়মতো পরিশোধ করেনি গ্রুপটি। ব্যাংক থেকে দেনা পরিশোধ করায় বারবার পেমেন্ট এগেইনেস্ট ডকুমেন্টের (পিএডি) মাধ্যমে ফোর্সড ঋণ সৃষ্টি হয়েছে। ফোর্সড ঋণও শোধ না করায় বারবার পুনঃতপশিলের মাধ্যমে মেয়াদি ঋণে পরিণত হয়েছে। এভাবে নন-ফান্ডেড থেকে বিপুল পরিমাণের ফান্ডেড ঋণ সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ঋণ নবায়নের কোনো সুযোগ নেই।
উল্লেখ যে, শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরুর পর গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পলাতক থাকা অবস্থায় শুক্রবার পদত্যাগ করেন। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিক্ষোভের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নররাও আর ব্যাংকে আসছেন না। এ অবস্থায় এখন আর বেআইনি এ সুবিধা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গত জুন পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। এর মানে একক কোনো গ্রুপকে ফান্ডেড ৩৪৭ কোটি ১০ লাখ এবং নন-ফান্ডেড ২৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেওয়া যাবে। দুইয়ে মিলে সর্বোচ্চ ৫৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিতে পারবে ব্যাংক। তবে এস আলম গ্রুপকে দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মোট পরিশোধিত মূলধনের যা ৪১৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে ফান্ডেড ঋণে পরিণত হয়েছে ৮ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। বাকি ৮১৬ কোটি টাকা রয়েছে নন-ফান্ডেড। নতুন করে সুবিধার জন্য গত ২৫ জুন জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয়।
কাফি
 
                         
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                