শীতের মৌসুম চলে এসেছে। এই আগমনে ত্বকের যত্নে সতর্ক থাকতে হবে। হিম হিম ঠান্ডা হাওয়ার দাপটে এই সময় ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ, শুষ্ক, টানটান। শীতের দাপুটে বাতাস, ধুলাবালু, ঠান্ডা, কাশি আর শীতপোশাক নিয়ে টালমাটাল সময়ে আর ব্যস্ত জীবনে ত্বকের দিকে খেয়াল রাখা হয় কমই। আর এ সুযোগেই আমাদের ত্বকের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়।
ঋতু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ত্বকে। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। ফলে ত্বক হয়ে পড়ে শুষ্ক ও রুক্ষ। ত্বক ফাটা, ত্বকে ছোপ ছোপ কালো দাগ, ফাঙ্গাস, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই ত্বক রুক্ষ ও অনুজ্জ্বল হয়ে যাওয়া রোধে দরকার বাড়তি যত্নের। ত্বকের শুষ্কতা রোধ করতে জলপাই তেল, লোশন বা ভ্যাসলিন মাখতে হবে। তাতে ত্বক আর্দ্রতা ধরে রাখবে। পানি, পানিজাতীয় খাবার, ফল ও ফলের রস, সতেজ শাকসবজি ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। কফির বদলে চা পান করা উত্তম। সবুজ চা খেতে পারলে খুবই ভালো, তবে লাল চায়ে আদা বা লেবু মিশিয়ে খেলেও উপকার হবে।
শীতের সকালের রোদে আলট্রাভায়োলেটের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময় পর তা পরিষ্কার করে আবার লাগাতে হবে। লোশনের এসপিএফ যেন অন্তত ১৫ থাকে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে ত্বকে যেটিই ব্যবহার করুন না কেন, ত্বকে যে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলেই দ্রুত সেটির ব্যবহার বন্ধ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
শীতের মৌসুমের সময় বেশিরভাগ কালো হয়ে যায় গলা ও ঘাড়। এই সমস্যার সমাধানে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন অ্যালোভেরা গলা আর ঘাড়ের উন্মুক্ত স্থানে ঘষে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হবে। অ্যালোভেরা লাগিয়ে দশ থেকে পনেরো মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। কমলা, টমেটোর রসও ত্বকের পরিচর্যায় খুব উপকারী। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় মুখ, হাত ও পায়ে ময়েশ্চারাইজার যুক্ত ক্রিম লাগাতে হবে। আধা চামচ শসার রসের সঙ্গে আধা চামচ দুধ ও আধা চামচ মধু মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। ঠান্ডা হলে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তবে তৈলাক্ত ত্বকে শুধু শসার রস বা শসা কুচি ব্যবহার করতে হবে।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন:
শুষ্ক ত্বক শীতে আরও বেশি রুক্ষ, শুষ্ক হয়ে পড়ে। এ ধরনের ত্বকের জন্য ভিটামিন ই তেল আধা চামচ আর আধা চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে প্রতিদিন লাগাতে পারেন। ত্বকে পুষ্টি জোগাতে ডিমের কুসুম, ১ চা-চামচ মধু, আধা চামচ জলপাই তেল ও পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
মিশ্র ত্বকের যত্ন:
প্রতিদিন হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে মিশ্র ত্বকের অধিকারীদের। তবে ত্বকের শুষ্ক জায়গাগুলোয় অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। সেদ্ধ করা মিষ্টিকুমড়া চটকে তার সঙ্গে মধু ও দুধ পরিমাণমতো মিশিয়ে ২০ মিনিট রেখে তারপর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন:
যাদের ত্বক বেশি তৈলাক্ত, তারা ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিংয়ের ক্ষেত্রে তেলমুক্ত (অয়েল ফ্রি) পণ্য ব্যবহার করুন। ক্লিনজিং ও টোনিংয়ের পর লেটুসপাতার রস, মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন। ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার হিসেবে টমেটোর রস খুব ভালো কাজ করে। আনারস, আপেল, পাকা পেঁপের সঙ্গে মধু মিশিয়ে প্যাক ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসেই।
শীতের মৌসুমে ত্বক সজীব রাখতে খাদ্যাভ্যাসে আনতে হবে পরিবর্তন। ভাজা খাবার পরিহার করে মৌসুমি ফল, সবজি, সালাদ ও স্যুপ রাখতে হবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম আর নিয়মিত বিশ্রামে ত্বক থাকবে ভালো থাকবে।
অর্থসংবাদ/এসএ/১৬:৫০/১১:২২:২০২০