অনেকেই জানেন সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সহজ-সরল, বিনয়ী ও মিষ্টভাষী একজন সফল মানুষ । এক কথায় ভীষণ মিশুক। কথা বলতে গেলেই কখনো উদাহরণ টানেন পাশ্চাত্যের জ্ঞানগুরুদের, কখনো ইসলামের কালজয়ীদের, কখনো বা মানবধর্মের মহামানবদের। নিজেও জীবনযাপন করেন সৎ ও সত্যতার নিরেট এক প্লাটফরমে। খুঁজে বেড়ান জীবনের মানে। মানুষটিকে কেউ ডাকেন সুফি সাহেব, কেউ বা মিজান সাহেব। পুরো নাম সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। ‘পিএইচপি ফ্যামিলি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি। ব্যবসার জগতে সফল এক কিংবদন্তি। শিল্পপতি হয়েও অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত সুফি মিজান। বিলাসিতা একেবারেই টানে না তাকে। ঘুরেফিরে এক পোশাকই পরেন তিনি।সাত ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে তার। সবসময় নিজেকে সমাজের কল্যানেই নিয়োজিত রাখেন।
অন্যসব বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মতো পিএইচপি কোনো গ্রুপ নয়, ফ্যামিলি। যা সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গর্ব করে বলেন। ফ্যামিলির মতোই এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। যেখানে সবাই আপন মনে হাসিমুখে কাজ করতে পারে। সুইপার, পিয়ন কিংবা প্রেসিডেন্ট সবাই এখানে এক। বিভিন্ন ধরনের স্টিল, গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম, শিপ রিসাইক্লিং, টেক্সটাইল, পেট্রলিয়াম প্রোডাক্টস, বিদ্যুৎ উৎপাদন, কৃষিজাত পণ্য, লেদার, ফিশারিজ, রিয়েল এস্টেটসহ বর্তমানে বিভিন্ন সেক্টরে ব্যবসা রয়েছে সুফি মিজানুর রহমানের। পিএইচপি ফ্যামিলির আওতায় দেশে-বিদেশে অন্তত ৩০টি আলাদা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই বিশিষ্ট শিল্পপতির।
বাংলাদেশ নিয়ে এবং নিজের পিএইচপি ফ্যামিলি নিয়ে এখনো অনেক স্বপ্ন দেখেন এই স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি প্রায়ই বলেন আমি চাই বাংলাদেশের কোনো মা-বোন যেন ক্ষুধার তাড়নায় কষ্ট না পায়। প্রতিটি কোমলমতি সন্তান যেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়। যেন চিকিৎসার অভাবে কোনো মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ না করে। প্রতিটি মানুষের যেন থাকার মতো একটি ছোট্ট কুটির আর চলার মতো একটি ছোট্ট ট্রান্সপোর্ট থাকে। পিএইচপি ফ্যামিলি নিয়েও একই স্বপ্ন দেখেন তিনি।দাদা ছিলেন ব্যবসায়ী। পাটের ব্যবসা করতেন। তার বাবাও ব্যবসা করতেন। কিছু খেত-খামারও ছিল। সেখানে ধান-পাট চাষ হতো। সুফি মিজানের ইচ্ছা ছিল শিক্ষক হবেন। কিন্তু তার বাবা চেয়েছেন তিনি ব্যবসা করবেন। তার পরও মাত্র ১০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেছিলেন সুফি মিজান। এখনকার হিসাবে মাত্র ১ ডলার ২০ সেন্টস। ইন্টারমিডিয়েট পাসের পরপরই ১৯৬৫ সালে সর্বপ্রথম তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে (বর্তমানে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড) চাকরি নিয়ে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন তিনি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এরপর ১৯৬৭ সালেই আরেকটি ব্যাংকে যোগ দেন। তবে স্বাধীনতার পরপরই চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন। তখন ব্যবসার জন্য তার মূলধন ছিল মাত্র ১ হাজার ৪৮৩ টাকা। এই টাকা দিয়েই ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সহকর্মীদের কাছে অন্য রকম এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব।ছেলেবেলায় মাকে হারিয়েছেন সুফি মিজান। জন্ম থেকেই শান্তশিষ্ট স্বভাবের মানুষ তিনি। বাবার কঠিন অনুশাসনে বড় হয়েছেন। অল্প বয়সে মাকে হারিয়ে বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন দ্বিগুণ স্নেহ-ভালোবাসা।স্কুল জীবন মোটামুটি শেষ হলেও কলেজ জীবনেই অনেকটা কষ্টের শুরু সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের। কলেজ জীবনে আর দশ জনের মতো বন্ধুদের সঙ্গে খুব একটা আড্ডাবাজির সুযোগ পাননি তিনি।
ইন্টারমিডিয়েট পাস করেই চাকরি শুরু করেছিলেন। সারা দিন কাজ করতেন। সন্ধ্যা ৬টায় নাইট কলেজে গিয়ে বসতেন। সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর রাত ১১টা পর্যন্ত ক্লাস করতেন। কেবল তাই নয়, ৪ মাইল হেঁটে বাড়ি ফিরতেন গভীর রাতে। এরপর নিজে হাতেই রান্নাবান্না করে খেতেন। আবার সকাল ৮টা থেকে অফিস। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই টিউশনি ও নিজের লেখাপড়া করছেন। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে সাংসারিক প্রয়োজনেই ছাত্র জীবন থেকে এমন কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রিও অর্জন করেছেন তিনি।
উল্যেখ্য, ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে সরকার ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, এককালীন দুই লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে একুশে পদক তুলে দেবেন।
একুশে পদক ২০২০ পেলেন যারা : ভাষা আন্দোলনে মরহুম আমিনুল ইসলাম বাদশা (মরণোত্তর); শিল্পকলায় (সংগীত) বেগম ডালিয়া নওশিন, শঙ্কর রায় ও মিতা হক; শিল্পকলায় (নৃত্য) গোলাম মোস্তফা খান; শিল্পকলায় (অভিনয়) এম এম মহসীন; শিল্পকলায় (চারুকলা) অধ্যাপক শিল্পী ড. ফরিদা জামান; মুক্তিযুদ্ধে মরহুম হাজি আক্তার সরদার (মরণোত্তর), মরহুম আব্দুল জব্বার (মরণোত্তর), মরহুম ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) (মরণোত্তর); সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ (আলী ওয়াজেদ জাফর); গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ কারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ; শিক্ষায় অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া; অর্থনীতিতে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম; সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান; ভাষা ও সাহিত্যে ড. নুরুন নবী, মরহুম সিকদার আমিনুল হক (মরণোত্তর) ও বেগম নাজমুন নেসা পিয়ারি; চিকিৎসায় অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার এবং গবেষণায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।