সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে ব্যাপক আকারে পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়ে পাকিস্তান। এইধাপে ২০১৯ সালের মার্চে পাকিস্তানে প্রথম পঙ্গপালের আক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে এটি সিন্ধু, দক্ষিণ পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনওয়ালা প্রদেশের নয় লাখ হেক্টর এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্থ হয় কোটি কোটি রুপি মূল্যের ফসল ও গাছপালা। ১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফিরদাউস আশিক আওয়ান বলেন, ‘দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে পঙ্গপালের সবচেয়ে তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েছি আমরা। এই হুমকি মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’।
খাদ্য-নিরাপত্তামন্ত্রী মাখদুম খসরু বখতিয়ার বলেন, বর্তমানে পঙ্গপালের অবস্থান পাকিস্তান-ভারত সীমান্তবর্তী চলিস্তান মরুভূমিতে। গত বছরের জুনে এই পঙ্গপাল ইরান থেকে পাকিস্তানে আসে। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পঙ্গপালের আক্রমণ অভূতপূর্ব এবং সতর্কতামূলক’।
ইতোমধ্যে জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে; ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়াসহ পূর্ব আফ্রিকায় পঙ্গপালের আক্রমণে মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। দিজিবুতি ও ইরিত্রিয়ায় ৩৬ হাজার কোটি পতঙ্গের আক্রমণে খাদ্য নিরাপত্তায় অভূতপূর্ব হুমকি তৈরি হয়েছে।
নতুন ধরনের পঙ্গপালের দশ লাখ পতঙ্গের একটি ঝাঁক এক দিনে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলতে পারে। আগামী এপ্রিলে এই পঙ্গপাল নতুন করে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। ওই সময়কেই পঙ্গপালের বংশবৃদ্ধির সময় বলে বিবেচনা করা হয়।
পাকিস্তানের খাদ্য নিরাপত্তামন্ত্রী মাখদুম খসরু বখতিয়ার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পঙ্গপালের উপস্থিতির কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। তিনি দাবি করেন, পাকিস্তানে অবস্থানের কিছুদিন পরই পতঙ্গগুলো ইরানে ফিরে যায় তবে তাপমাত্রা কম থাকায় এখনও পাকিস্তানে থেকে গেছে সেগুলো।
এদিকে ২ ফেব্রুয়ারি(রবিবার) রাতে ফাজিলকা জেলা দিয়ে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে প্রবেশ করে পঙ্গপালের বিশাল একটি ঝাঁক। তিন কিলোমিটার বিস্তৃত ও এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই ঝাঁকটিকে ঠেকাতে রাজ্য সরকারের একাধিক দফতর ১৩ ঘণ্টা ব্যাপী কাজ করে। এরআগে পতঙ্গটি পার্শ্ববর্তী ভারতের রাজস্থান রাজ্যে বিস্তৃত এলাকার ফসল নষ্ট করে।
পাঞ্জাবের পুরো রাজ্য প্রশাসন পঙ্গপাল ঠেকানোর চেষ্টায় নেমেছে। সোমবার কৃষি বিভাগের কর্মীরা অবশ্য দাবি করেছেন, পঙ্গপাল আর ফসলের ক্ষতি করতে পারবে না। হুমকি ঠেকানো গেছে।
পাঞ্জাবের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইউ), সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, বেসামরিক প্রশাসন, ও কৃষকেরা পঙ্গপাল মোকাবিলায় অংশ নেয়। পাঞ্জাবের কৃষি বিভাগের পরিচালক সতন্তর কুমার আইরি বলেন, পতঙ্গ ধ্বংস করতে চারশো থেকে পাঁচশো টন কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান ছাড়াও সৌদি আরবও পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়েছে। সংবাদমাধ্যম বলছে, পতঙ্গটির আক্রমণ দেশটিতে দিনকে রাত বানিয়ে তুলছে।