ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে মিলে করোনা ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বেরোয় অ্যাস্ট্রাজেনেকার কভিড ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্পে কম্পিউটার সিস্টেমে হ্যাকারদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্তত দুজন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, সাইবার হামলাকারীদের টার্গেট হয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা। একই সঙ্গে লিংকডইন ও হোয়াটসঅ্যাপে প্রতিষ্ঠানটির হয়ে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে দিয়েছিল হ্যাকাররা।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বিজ্ঞপ্তি পুরোটাই ভিত্তিহীন। এর মধ্য দিয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কর্মী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের ব্যক্তিগত কম্পিউটারে প্রবেশের চেষ্টা করা হয়েছে। ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ম্যালিকুলার কোড ও ম্যালওয়্যার। ওই সময় প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একজনের বরাতে ‘প্রতিষ্ঠানের ভেতরের কেউ’ জড়িত থাকার দাবি তোলা হয়।
যদিও পরবর্তী সময়ে এমন দাবি হালে পানি পায়নি। এসব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে কভিড ভ্যাকসিন তৈরির সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এখন রয়টার্সের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ব্রিটিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো করোনা ভ্যাকসিন তৈরির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিংয়ের পেছনে জড়িত উত্তর কোরীয় হ্যাকাররা।
বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরীয় হ্যাকারকরা বিশ্বজুড়ে ধারাবাহিকভাবে সাইবার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এসব হামলার মোটিভ সংশ্লিষ্টদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সাইবার নিরাপত্তা খাতের মার্কিন কর্মকর্তা ও গবেষকরা অ্যাস্ট্রাজেনেকায় হামলার মোটিভ বিশ্লেষণ করে উত্তর কোরীয় হ্যাকারদের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলেছেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে জেনেভায় জাতিসংঘের উত্তর কোরীয় মিশনের কাছে জানতে চাওয়া হয়ছিল। তারা বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও এর আগে এমন সাইবার হামলার অভিযোগ পিয়ংইয়ং সরাসরি অস্বীকার করেছিল।
টেলিকম জায়ান্ট মাইক্রোসফট চলতি মাসেই অভিযোগ করেছিল, করোনা ভ্যাকসিন তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক দেশের কোম্পানি সাইবার হামলার মুখে পড়েছে। এর পেছনে উত্তর কোরিয়ার অন্তত দুটো হ্যাকিং গ্রুপ সরাসরি জড়িত। গত শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার আইনপ্রণেতারা এমন অন্তত দুটো সাইবার হামলা নস্যাৎ করার জন্য দেশটির গোয়েন্দাদের ধন্যবাদ জানান।
সাইবার সিকিউরিটি বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরীয় হ্যাকারদের এমন কর্মকাণ্ড নতুন নয়। আগেও বিভিন্ন সময় তারা বিশ্বজুড়ে ধারাবাহিক সাইবার হামলা ঘটিয়েছে। তবে আগে তাদের টার্গেট ছিল প্রতিরক্ষা খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোম্পানি ও গণমাধ্যম। এখন পরিস্থিতি ও টার্গেট বদলাতে শুরু করেছে। করোনাকালে ভ্যাকসিন তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিশেষত উত্তর কোরীয় সাইবার হামলাকারী গ্রুপগুলো অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো করোনা ভ্যাকসিন তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোম্পানিগুলোর ওপর সারাক্ষণ চোখ রাখছে। তারা ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে যেকোনো ফর্মুলা কিংবা তথ্য হাতিয়ে নিতে সদাসচেষ্ট। ফলে বৈশ্বিক মেডিকেল সিস্টেম ও করোনা ভ্যাকসিন সংক্রান্ত ইস্যুতে ‘রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত’ সাইবার ঝুঁকি এড়ানোর সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, বিশ্ববাসী অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে সবচেয়ে আশাবাদী ছিল। তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি ৬২-৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর বলেও দাবি করা হয়। তবে এত স্বল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ কার্যকারিতার দাবি তোলায় সমালোচনার মুখে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনটি নিয়ে ফের ট্রায়ালে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
রয়টার্স, বিবিসি ও সিএনবিসি অবলম্বনে
অর্থসংবাদ/এসএ/১৪:০৯/১১:২৯:২০২০