এলপি গ্যাস লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মোট ৬৭ কোটি ৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয় হবে। ইতোমধ্যে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদে এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এলপি গ্যাস লিমিটেডের (এমডি) প্রকৌশলী মো. ফজলুর রহমান খান বলেছেন, দেশে এলপি গ্যাসের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীতে এলপির বাজার বড় হলে আমদানিনির্ভরতা যাতে কমানো যায়, সেজন্য এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি আমরা।
বর্তমানে বিপিসির মালিকানাধীন এলপি গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড বছরে ১৫-২০ হাজার টন এলপি গ্যাস বোতলজাত করে। এজন্য বছরে ১৫-১৬ লাখ সিলিন্ডার প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোম্পানিটির কাছে সিলিন্ডার রয়েছে মাত্র সাড়ে চার লাখ। এসব সিলিন্ডারের বেশির ভাগ পুরনো এবং গুণগত মান কমে এসেছে। এ অবস্থায় সিলিন্ডারের ঘাটতি মেটাতে বেশ আগে থেকেই নিজস্ব প্লান্ট করার পরিকল্পনা ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, দেশের উত্তর অঞ্চলে গ্যাসের চাহিদা বাড়বে এমন পরিকল্পনা থেকে ১৯৮৫ সালে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার বিপিসি সিলিন্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপনের জন্য ৬ দশমিক ৯ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিপিসি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে একটি গ্যাসকূপ থেকে ব্যাপক পরিমাণে কনডেনসেট পাওয়া যাবে এমন পরিকল্পনা থেকেই এ জমি অধিগ্রহণ করা হয় সেখানে। সেই কনডেনসেট পাইপলাইনের মাধ্যমে সেখানে নিয়ে বোতলজাত করা হবে এমন চিন্তাও ছিল সংস্থাটির। কিন্তু ধারণা অনুযায়ী আশুগঞ্জে কনডেনসেট পাওয়া না যাওয়ায় প্রায় ৩৫ বছর ওই জমি পতিত অবস্থায় পড়ে ছিল। কিন্তু আগের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় এলপি গ্যাস কোম্পানি ওই জমিতে নতুন করে ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে।
এলপি গ্যাস কোম্পানি বলছে, প্লান্ট স্থাপনের জন্য প্রায় তিন একর জমির প্রয়োজন হবে। বিপিসির আগের পরিকল্পনার জন্য তৈরি করা একটি অফিস ভবন, ১১ হাজার ৮২০ বর্গফুটের তিনটি শেড, বাউন্ডারি ওয়াল, ফায়ার পন্ড, সিকিউরিটি পোস্ট রয়েছে। যেগুলো ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপিত হলে কাজে লাগানো যাবে বলে জানায় সংস্থাটি।
এলপিজি প্লান্ট স্থাপনের জন্য বাগেরহাটের মোংলায় বিপিসি জমি অধিগ্রহণ করেছিল এর আগে। কিন্তু সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় পরে তা বাতিল হয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে নেয়া এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সিলিন্ডার বোতলজাত করার জন্য নানা সময়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং পরিকল্পনা ঘাটতি থাকায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন পরিকল্পনাগুলো আগামীতে লাভজনক অবস্থায় থাকবে এমন গুরুত্ব দিয়ে নেয়া হচ্ছে। ফলে বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি উদ্যোগে এলপিজির বাজার বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে (ত্রিপুরা মৌজা) একটি প্লান্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে বিপিসির। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের আপত্তির কারণে ওই জায়গায়ও এখন এলপিজি প্লান্ট করার সম্ভাবনা ধোঁয়াশায় পরিণত হয়েছে।
দেশে বেসরকারি খাতের অন্তত ২২টি কোম্পানি বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করে এলপিজি ব্যবসা করছে। এর মধ্যে অন্তত চার-পাঁচটি কোম্পানি এলপিজি সিলিন্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং করছে। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে এসব কোম্পানি যেখানে লাভের অপেক্ষায় রয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির এমন উদ্যোগ এলপিজির বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বেসরকারি এলপিজি ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, সরকার একদিকে এলপিজি কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে। অন্যদিকে নিজেই এ ব্যবসায় নামছে। তাহলে কীভাবে মুনাফা করবে বেসরকারি কোম্পানিগুলো?
বর্তমানে বিপিসির মালিকানায় পরিচালিত এলপি গ্যাস লিমিটেডের আওতায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় (উত্তর) এবং সিলেটের কৈলাসটিলায় দুটি এলপিজি বটলিং প্লান্ট রয়েছে। এ প্লান্ট দুটি থেকে বছরে ২০ হাজার টন এলপিজি বোতলজাত করে বিপণন হচ্ছে।
অর্থসংবাদ/এসএ