একটি নদীর মৃত্যু মানে একটি সভ্যতার মৃত্যু: চাঁদপুর জেলা প্রশাসক

একটি নদীর মৃত্যু মানে একটি সভ্যতার মৃত্যু: চাঁদপুর জেলা প্রশাসক

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেছেন, একটি নদীর মৃত্যু মানে একটি সভ্যতার মৃত্যু। নদীকে তার গতিতে বাঁচতে দিতে হবে। কোন দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার নেই কেউ কি বলতে পারবেন? পৃথিবীর সকল দেশেই প্লাস্টিকের ব্যবহার আছে। পৃথিবীর সকল দেশেই প্লাস্টিক, বালির যথাযথ ব্যবস্থাপনা রয়েছে। যা আমাদের দেশে নেই।


রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকাল ৫টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দ্বিতীয় পর্বে ‘নদ-নদীকে জীবন্ত স্বত্ত্বা ঘোষণা-কিভাবে নদীর অধিকারের স্থায়ী ভিত্তি নির্মাণ করা যাবে?’ বিষয়ে গণশুনানি সভায় তিনি এ কথা বলেন।


তিনি বলেন, আমাদের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে। নদী দূষনের ক্ষেত্রে আমাদের ব্যবস্থাপনার সমস্যা রয়েছে। আর নদী দখলের ক্ষেত্রে আমাদের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। প্রতি মাসে আমরা পানির মান পরীক্ষা করি। আমাদের ডাকাতিয়া নদীর মান ভাল আছে। আপনার আমার ফেলে দেয়া পলিথিন সবশেষে যাচ্ছে ফসলি জমিতে। যার কারণে আমাদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। নদীতে পলিথিন ফেললে নদী দূষণ হচ্ছে। পলিথিনের কারণে আমাদের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। যে কোন কিছুর বিনিময়ে আমাদের পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।


ডিসি বলেন, চরের কারণে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির সম্মুক্ষিণ হবে। আমাদের ডুবোচরগুলো কেটে দিতে হবে এবং কাটানো দরকার।


তিনি আরও বলেন, দেশ, প্রকৃতি ও সভ্যতাকে বাঁচাতে হলে আমাদের নদীগুলো বাঁচাতে হবে। নদী দখলের নামে আমাদের দেশে একটি সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করা হয়ে থাকে। নদী ভাঙা-গড়া একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। নদীকে শাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। নদীকে যদি আমরা দখল না করি, পলিথিন না ফেলি তাহলে নদী ভাল থাকবে। আমাদের নদী, খাল ভরাট হয়ে গেছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নদীকে কেন আমরা বাঁচিয়ে রাখবো তা প্রথমেই জানতে হবে।


এই পর্বে আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নুর আলম দীন, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুর এর উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক, কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মো. ফজলুল হক, পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচারক মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক লে. মো. শোয়েব, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি রহিম বাদশা, সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, মৎস্য ব্যবসায়ী মো. সোহেল গাজী প্রমূখ।


গণশুনানি পর্বে সভাপতিত্ব করেন পরিবশে ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন এবং উপস্থাপনায় ছিলেন স্থানীয় আয়োজক মুসাদ্দেক আল-আকিব। একই সাথে সঞ্চালক বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ পাঠ করেন।


এছাড়াও বেলা আড়াইটায় চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রথম পর্বে ‘বালুমহাল ও বালুব্যবস্থাপনা কিভাবে টেকসই, স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক হতে পারে?’ বিষয়ে বহুপক্ষীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।


সর্বশেষ তথ্যানুযায়ি দেশে নদী সংখ্যা ১১৫৬। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নদীর সংখ্যা ছিলো দুই হাজার। পদ্মা-মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন বৈধ-অবৈধ নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। নদীর বালু উত্তোলন করাও প্রয়োজন। এসব বিষয়গুলো একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে উদ্যোগ নিয়েছে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)। তারই অংশ হিসেবে অংশীজনদের নিয়ে চাঁদপুরে দুই পর্বের এ সভা ও গণশুনানি অনুষ্ঠত হয়।


প্রথম পর্বের সভায় সভাপতিত্ব করেন নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুরিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান।


তিনি বলেন, নদীর পরিবেশ রক্ষায় অনেকেই জড়িত। এর মধ্যে নৌ পুলিশও কাজ করে। মূলত আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে পুলিশ। তবে নদীর বালু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সকল অংশীজনের মতামত লাগবে। এছাড়া যারা এটি নিয়ে গবেষণা করেন তাদের মতামত নিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবে। যেহেতু চাঁদপুরে বর্তমানে কোন বৈধ বালু মহাল নেই, সেকারণে আমরা বালু কাটার সংবাদ পাওয়ামাত্র ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। বলতে পারি অবৈধভাবে বালুকাটা অনেকটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে।


এসপি আরও বলেন, চলতি জানুয়ারি মাসে পদ্মা-মেঘনায় অভিযান চালিয়ে ৩৪টি ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৮৮জন। এজহার নামীয় আসামী হলেন ৮৪জন। তিনি বলেন, এই ধরণের ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা প্রয়োজন। বিগত মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে আমি জনগণের মধ্যে সচেতনতা পাইনি। বালুমহাল ও বালুউত্তোলনের ক্ষেত্রে একটি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসতে হলে সবার আগে স্থানীয় জনগণকে সচেতন হতে হবে। এরপর বহুমুখী সমন্বয় প্রয়োজন। এটি বন্ধ করার জন্য নীতিমালা প্রনোয়নে আমরা কাজ করতে চাই।


এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল-ইমরান খাঁন, চাঁবিপ্রবির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. বাইজিদ আহমেদ রনি, চাঁসকের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সুলতানা তৌফিকা আক্তার, চাঁদপুর নদী বন্দরের অভ্যন্তরীণ জাহাজ পরিচালনা বিভাগের পরিদর্শক মো. আশিকুর রহমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ গাজী, বাংলাদেশ নৌ-যান পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ।


প্রথম পর্ব সঞ্চালনায় ছিলেন আয়োজকদের পক্ষে মো. মনির হোসেন। টেকসই বালু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ধারণা নিয়ে বক্তব্য দেন পরিবশে ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ক্ষতিকর ও প্রয়োজনীয়তা বিষয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য তুলে ধরেন চাঁদপুর পরিবেশ সংরক্ষন আন্দোলন এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক মো. আশিক খান। আর এই বিষয় লিখেছেন অনুষ্ঠানের স্থানীয় আয়োজক মুসাদ্দেক আল আকিব। শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন আল-আমিন মডেল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ.ন.ম ফখরুল ইসলাম মাছুম।


এই পর্বে জেলে, বালুবাহী বলগেট মালিক সমিতির নেতা ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা পরামর্শমূলক বক্তব্য দেন। বক্তারা বালু উত্তোলনের ভিন্ন মত দিলেও ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঐক্যমত হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।


পরামর্শমূলক এই সভায় বক্তাদের আলোচনায় জানা গেছে, চাঁদপুরে ৭টি বৈধ বালুমহাল ছিলো। কিন্তু এখন একটি বালুমহালের অনুমোদন নেই। উচ্চ আদালত থেকে দুটির জন্য অনুমোদন এনে জেলা প্রশাসনের নিকট দেয়া হলেও সেগুলোর জন্য নীতিগত কোন সিদ্ধান্ত না দিয়ে বালু উত্তোলনের সমস্যাগুলো তুলে ধরে জবাব দেয়া হয়। এছাড়াও জানাগেল সেলিম চেয়ারম্যান থেকে এখন পর্যন্ত পূর্বের বালু তোলার রাজস্ব বকেয় আছে ২৭৪ কোটি টাকা।


দুই পর্বের অনুষ্ঠানে আরডিআরসি ছাড়াও সহযোগী আয়োজক সংগঠন ছিলো সিএনআরএস, আরডিআরএস, অক্সপাম এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।


কাফি

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

রংপুরে ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, ছড়িয়েছে যেসব জায়গায়
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
চাঁদাবাজির অভিযোগে গণপিটুনি, ইউপি সদস্য নিহত
অবরোধে স্থবির খাগড়াছড়ি, থমথমে গুইমারা
শিশু তায়েবা হত্যাকাণ্ডে চাচিসহ গ্রেপ্তার ৩
অবরোধে থমথমে খাগড়াছড়ি, ১৪৪ ধারা বহাল
খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি
খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধ, বিপাকে পর্যটকরা
বিপৎসীমার ওপরে কাপ্তাই বাঁধের পানি
গাজীপুরে ঝুটের গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট