ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম সর্বশেষ সপ্তাহে টনে সর্বোচ্চ ৩ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় খাদ্যপণ্যটির রফতানি মূল্য দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৩৭৮-৩৮৩ ডলার। এর আগের সপ্তাহে ভারতের বাজারে প্রতি টন রফতানিযোগ্য চাল মানভেদে ৩৭৫-৩৮১ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে টানা তিন সপ্তাহ ধরে দেশটিতে চালের বাজার চাঙ্গা রয়েছে। ভারতের বাজারে চালের রফতানিমূল্য দুই মাসের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ।
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের রফতানিকারকরা জানায়, কোভিড-১৯ এর মধ্যে এশিয়ার অন্যান্য রফতানিকারক দেশগুলোর তুলনায় ভারত কিছুটা কম দামে চাল রফতানি করছে। এ কারণে আমদানিকারকদের কাছে ভারতীয় চালের চাহিদা রয়েছে বেশি। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।
গত এক মাসে ভারতের চাল রফতানি খাত বেশ কয়েকটি সুখবর শুনেছে। তিন দশকের বেশি সময়ের মধ্যে চীন প্রথমবারের মতো ভারত থেকে চাল আমদানির ঘোষণা দিয়েছে। প্রতি বছর চীন প্রায় ৪০ লাখ টন চাল আমদানি করে। তবে দেশটি ভারত থেকে খাদ্যপণ্যটি আমদানি করতো না। সম্প্রতি চীন-ভারতের রাজনৈতিক বিরোধ চলছে। লাদাখ সীমান্তে রক্ত ঝরিয়েছে দুই দেশ। এর মধ্যেই বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে ভারতীয় চাল কেনার ঘোষণা অবাক করেছে খাতসংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বিভি কৃষ্ণ রাও জানান, চুক্তির শর্ত মেনে ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি সময়ে ভারত থেকে এক লাখ টন চাল কিনবে চীন। এক্ষেত্রে প্রতি টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৩০০ ডলার।
তিনি আরো বলেন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার কিংবা থাইল্যান্ডের তুলনায় ভারত থেকে বেশ কম দামে চাল কেনার সুযোগ পাচ্ছে চীন। মূলত এ কারণে সীমান্ত বিরোধের মধ্যেও খাদ্যপণ্যটি কিনতে ভারতমুখী হয়েছে দেশটি।
সম্প্রতি ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল (নন বাসমতি) আমদানির অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা এসব চাল বাংলাদেশে পাঠাবে মুম্বাইয়ের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতি কেজি চালের দাম ধরা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৮ টাকা।
করোনাভাইরাসের মধ্যে অল্প সময়ের ব্যবধানে চীনের পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজারে চাল রফতানির পথ খুলে যাওয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। তাদের মতে, আফ্রিকার বাজারে চাহিদা আগে থেকেই বাড়তি ছিল। এখন চীন, বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলো ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু করছে। এ পরিস্থিতি বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ ভারতের বাজারে খাদ্যপণ্যটির রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
দেশটির হো চি মিন শহরের রফতানিকারকরা জানান, করোনা মহামারীর কারণে মাঝে এক মাস চাল রফতানি বন্ধ রেখেছিল ভিয়েতনাম। এখন রফতানি কার্যক্রম ফের শুরু হলেও চাহিদা খুব একটা বাড়েনি। এ কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনামের বাজারে খাদ্যপণ্যটির রফতানি মূল্য তুলনামূলক স্থিতিশীল রয়েছে।
এদিকে ভারতের বাজারে বাড়তির দিকে থাকলেও ভিয়েতনামে চালের রফতানি মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটিতে প্রতি টন রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৪৭০-৪৯০ ডলারে।