বান্দরবানে ইউসিবির কৃষি উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ

বান্দরবানে ইউসিবির কৃষি উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ

‘ব্যাংক শুধু টাকা রাখে—এই ধারণাটাই বদলে গেলো আজ। কীভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায়, সেই বিষয়ে কোনো ব্যাংক যে কৃষকদের ডেকে এনে প্রশিক্ষণ দিতে পারে, তা জীবনে এই প্রথম দেখলাম’—উথুয়াই মারমার কণ্ঠে কেবল বিস্ময় নয়, ছিল আত্মবিশ্বাসের নতুন দীপ্তিও। তিনি নাইক্ষ্যংছড়ির একজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা, আর এই প্রশিক্ষণ তাঁকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে।


বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদে কৃষি মানে এতদিন ছিলো জীবনধারণের সংগ্রাম। কিন্তু সেই কৃষিই এখন হয়ে উঠছে সম্ভাবনার অন্য নাম—বাজার, প্রযুক্তি আর উদ্যোক্তাবোধে মোড়ানো টেকসই জীবিকার নতুন দিগন্ত। আর এই রূপান্তরের যাত্রায় সঙ্গী হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি)।


‘ভরসার নতুন জানালা’ শীর্ষক এগ্রো-সিএসআর প্রকল্পের আওতায় ইউসিবি সম্প্রতি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজন করে একটি দিনব্যাপী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, যেখানে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ১৭০ জন কৃষি উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন।


রুমার কৃষক অংম্রা থুই মারমা প্রশিক্ষণ শেষে বলেন, আমি ভাবতেই পারিনি, কেউ একদিন বান্দরবানে এসে কাজু বাদাম আর কফি চাষ নিয়ে বলবে! এখন শুধু চাষ নয়, আমি কৃষিকে পুরোপুরি একটি ব্যবসা হিসেবে ভাবছি।’ এই প্রশিক্ষণ শুধু তথ্য দেওয়ার আয়োজন ছিল না, এটি ছিল আত্মবিশ্বাস গড়ার এক কর্মশালা। কৃষি উদ্যোক্তারা জেনেছেন—কীভাবে ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ নিতে হয়; আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশল; প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য চাষে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি; এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, উৎপাদিত পণ্য কীভাবে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে তুলে ধরা যায়।


অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে কৃষির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউসিবির মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা থাকলে এখানকার কৃষকরা উদ্যোক্তায় পরিণত হতে পারেন।


সভাপতিত্ব করেন ইউসিবির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাবিল মুস্তাফিজুর রহমান। তাঁর মতে, এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে পুঁজি করে প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগোতে পারি। ইউসিবি এই রূপান্তরে পাশে আছে এবং থাকবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—বিটিভির ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক, বান্দরবানের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এম এম শাহ্ নেয়াজ, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অভিজিৎ শীল, সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুয়েল মজুমদার, এবং ইউসিবির চিফ কমিউনিকেশন অফিসার জীশান কিংশুক হক, এসএমই ও এগ্রি ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ সেলিম চৌধুরী।


রেজাউল করিম সিদ্দিক বলেন, আধুনিক কৃষি মানে শুধু জমিতে চাষ নয়—সঠিক পরিকল্পনা, বাজার বোঝা এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি। বান্দরবানের পাহাড়ি জমিতে কাজু বাদাম, কফি, কমলা, আম কিংবা মাশরুম—সবই এখন সম্ভব।


এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪টি জেলায় পর্যায়ক্রমে এ ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্য শুধু কৃষি বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া নয়—গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে তাঁদেরকে আর্থিক স্বাধীনতার পথে এগিয়ে দেওয়া।


অংশগ্রহণকারী অংম্রা থুই মারমা শেষে বলেন, আগে ভাবতাম শুধু উৎপাদন করলেই হলো, এখন বুঝছি ব্র্যান্ড তৈরি করাটাও আমার কাজ। একদিন আমার নিজের কাজু বাদামের একটা ব্র্যান্ড হবে—এই স্বপ্নটাই এখন আমার শক্তি।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক এমটিও পার্টনারদের নিয়ে বিকাশে কর্মশালা
পাঠাও নিয়ে এলো মার্চেন্টদের জন্য পেমেন্টের দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সমাধান ‘ইনস্টাপে’
চট্টগ্রাম ও বরিশালে বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা’র আয়োজনে ‘বিজ্ঞান উৎসব’
সনি এক্সপোর মেয়াদ বাড়লো দুই দিন
নীলফামারী অঞ্চলে ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট মিট আয়োজন
বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে এফআইসিজিএসে অংশ নিলো কমিউনিটি ব্যাংক
রাজশাহীতে কমিউনিটি ব্যাংকের মাধ্যমে ট্রাফিক মামলার ফাইন কালেকশন উদ্বোধন
এবি ব্যাংকের উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচির সমাপনী ও সনদ বিতরণ
রোটারি ক্লাব অব ঢাকা মেগা সিটির প্রেসিডেন্ট হ্যান্ডওভার
মাসুমা রহমান নাবিলার সঙ্গে ভিট বাংলাদেশের চুক্তি