দুর্নীতিবাজ রাজনীতির অবসান: এক জাতীয় অঙ্গীকার

দুর্নীতিবাজ রাজনীতির অবসান: এক জাতীয় অঙ্গীকার

রাজনীতিবিদরা যদি রাজনীতি করে দেশের উন্নয়নে কোনো অবদান রাখতে না পারে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। দরকার হলে জেলহাজতে পাঠাতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপকর্মে যুক্ত হওয়ার সাহস না পায়।


চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস, অবৈধ অর্থ পাচার আর দুর্নীতি—এই অপরাধগুলোতে তারা সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, গত ৫৪ বছরে তারা দেশের জন্য কী কোনো ভালো কাজ করেছে? যদি না করে থাকে, তবে কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?


আপনি হাতে গুনে একজন সৎ রাজনীতিবিদের নাম বলতে পারবেন কি, যার নামে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই? যদি না পারেন, তবে বুঝতেই হবে যে গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাই দুর্নীতিগ্রস্ত।


তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়—অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী ধরনের সংস্কার করছে? গত এক বছরে তাদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দেশের মানুষের উন্নয়নের পরিবর্তে তুলনামূলকভাবে এসব অভিযোগই আলোচনায় এসেছে, যা একটি ভয়াবহ আশঙ্কার বিষয়।


এরপরও কি জাতি হিসেবে আমাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই? নিশ্চয়ই আছে। এই পরিস্থিতিকে এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।


আমি আমার অবস্থান তুলে ধরলাম। যদি আপনি আমার কথার সঙ্গে দ্বিমত করেন, অনুগ্রহ করে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে তা উপস্থাপন করুন। আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত। কিন্তু যদি আমার বক্তব্যই সত্য প্রমাণিত হয়, তবে আসুন—আমরা একসাথে রুখে দাঁড়াই এবং দুর্নীতিবাজ রাজনীতির অপশক্তিকে বিদায় করি।


কারণ এরা দেশের শত্রু, এদের বাংলাদেশের মাটিতে থাকার কোনো অধিকার নেই। সংস্কার মানে একটাই—দুর্নীতিবাজ রাজনীতি দেশ থেকে চিরতরে বিদায় করা।


আমাদের করণীয়
• গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা।


• নাগরিকদের বোঝানো—দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ মানেই দেশের শত্রু।


• বিশেষ দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার।


• অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের কোষাগারে ফেরত আনা।


• দুর্নীতিবাজদের আজীবন রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা এবং তাদের পরিবারের বেআইনি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা।


• দুর্নীতিবাজ প্রার্থীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা।


• রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।


• তরুণ প্রজন্মকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত করা।


• শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততা ও নৈতিকতা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।


• দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বর্জন—তাদের বিয়ে, সমাবেশ, সমাজে কোনো সম্মান না দেওয়া।


• নিরপেক্ষভাবে দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনা।


• “দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ” ঘোষণা করে বাস্তবায়ন রোডম্যাপ তৈরি।


• বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনা।


• দুর্নীতিবাজদের বৈদেশিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ।


• সততা, স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারকে জাতীয় সংস্কৃতিতে রূপান্তর।


• প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে “সততার উত্তরাধিকার” গড়ে তোলা।


• দুর্নীতিবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা।


• প্রমাণ সংগ্রহ করে জনগণের সামনে প্রকাশ করা।


• আন্দোলনের মাধ্যমে জনচাপ সৃষ্টি করে সরকারকে বাধ্য করা।


• বিকল্প সৎ নেতৃত্বকে গড়ে তোলা।


• জাতীয় চার্টার বা ঘোষণা প্রকাশ করা—যেখানে থাকবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতির অবস্থান ও ভবিষ্যতের অঙ্গীকার।


জাতীয় অঙ্গীকার
• দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই চালাবো।


• সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করবো।


• দুর্নীতিবাজদের শুধু বিচার নয়, রাজনীতি থেকে চিরতরে বহিষ্কার করবো।


• জনগণ মিলে তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করবো, যাতে আর কখনো কেউ দুর্নীতির সাহস না করে।


• ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র উপহার দেবো।



সারকথা: দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকে বিদায় না দিলে, জাতির মুক্তি নেই। তাই আসুন, আমরা একসাথে রুখে দাঁড়াই।



রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ জন্মেছে জনগণের স্বপ্নে, কোনো পরিবারের জন্য নয়।
দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সংকটে দেশ: বন্ড মার্কেট বিকাশের প্রয়োজনীয়তা ও দিকনির্দেশনা
দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সমাধান- পরকালে, নাকি বিবেকের ময়দানে?
জাতিসংঘ: পতনের ছায়া নাকি পুনর্জাগরণের আলো?
পিআর পদ্ধতি কার্যকর করতে আগে দরকার প্রশাসনিক সংস্কার
হাটে জন বিক্রি আধুনিক দাসত্বের অন্ধকার ও রাষ্ট্রীয় দায়
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দফা বনাম বাস্তবতা
নরওয়ের অভিজ্ঞতা বনাম বাংলাদেশের বাস্তবতা: জবাবদিহিহীন রাজনীতির অন্তরায়
তরুণ প্রজন্মের চোখে আজকের বাংলাদেশ গুজব, বিভ্রান্তি আর অনিশ্চয়তায় ভরা
কেন শিবিরের বিরুদ্ধে এত প্রপাগান্ডা?