পুঁজিবাজারে মিশ্রাবস্থা: চলতি বছর জানুয়ারিতে বড় ধসের মধ্যদিয়ে শুরু হয় পুঁজিবাজারের লেনদেন। মার্চে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব দেখে সরকার সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণা দেয় এবং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। তার কারণে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৬৬ দিন পর পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হলে মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও মোটামুটি চাঙাভাব লক্ষ্য করা যায়।
জিডিপিতে পতন: চলতি বছরে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে কোভিড-১৯ এর কারণে প্রবৃদ্ধিতে পতন হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসেবে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। তবে অনেক বিশ্লেষকেরা এই অঙ্ক আরও কম হওয়ার কথা বলেন।
বেড়েছে দরিদ্র: মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে এখন অচল অবস্থা চলছে। তেমনি এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। দেশে জুলাইয়ে ২৫টি পাটকল ও ডিসেম্বরে ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে হয়ে যায়।
এ ছাড়া বন্ধ হয়ে গেছে বহু বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে অনেক লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এর ফলে দিন দিন দেশের মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) হিসেবে, কোভিড-১৯ এর কারণে দেশে নতুন করে এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে।
রিজার্ভে রেকর্ড: প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। জানা গেছে, বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে প্রবাসীরা দেশে ফিরে এলেও আয় বাড়ছে।
কারণ, বিদেশে চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় অবৈধ পথে আয় আসা কমে গেছে। এ জন্য বৈধ পথে আয় বাড়ছে। আর আমদানি কমে যাওয়ায় রিজার্ভে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এছাড়া প্রবাসী আয় বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করে সরকার। এরপর থেকেই প্রবাসী আয়ে গতি এসেছে। তবে করোনার পরে তাতে নতুন মাত্রা দেখা দিয়েছে।
আমদানি-রফ্তানি: ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয় হ্রাস পেয়েছে ৮ দশমিক ৫৬ শংতাশ। কোভিড-১৯ এর কারণে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ভাগে তা আরও কমেছে। অর্থাৎ দেশের মানুষের ভোগ ব্যয় হ্রাস পেয়েছে এবং নতুন শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগ কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১৫ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ শতাংশ কম। এদিকে, কোভিড-১৯ এর কারণে ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত এবং বিভিন্ন কারখানা বন্ধ থাকায় এপ্রিলে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়। শেষ পর্যন্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিন হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ হ্রাস পায়।
ব্যাংক খাত: কোভিড-১৯ এর কারণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে খোলা ছিল ব্যাংক। এসময় গ্রাহকদের সেবা দিতে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় ব্যাংকাররা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় অনেক ব্যাংকার। এর ফলে প্রণোদনার বাইরে ব্যাংক খাতের অন্য ঋণ বিতরণ কার্যক্রম এখন অনেকটাই স্থবির। পাশাপাশি বন্ধ আছে সব ধরনের ঋণের কিস্তি আদায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক করোনা মহামারির কারণে জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত ঋণ শ্রেণিকরণে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। পরে দুই দফায় তার মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। তবে ২০২০ সালে নতুন দু‘টি ব্যাংককে কার্যক্রম শুরুর অনুমতি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্রাটেজিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে অনুমোদন এবং শরিয়াহভিক্তিক ইসলমি বন্ড সুকুক ছাড়ার মাধ্যমে ব্যাংক খাতে গতি আনতে চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।