যুক্তরাজ্যে আজ সোমবার থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে তা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোয় পৌঁছে গেছে।
দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, আজ থেকে ব্যবহার শুরুর জন্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রায় ৫৩ লাখ ডোজ টিকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রথম ধাপে এই টিকা দেওয়ার জন্য অগ্রাধিকারে থাকা গোষ্ঠীর সদস্যদের ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথম ধাপে এই টিকা পাবেন—এমন ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সম্মুখসারিতে থাকা জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মী, সামাজিক সেবাকর্মী, কেয়ার হোমের বাসিন্দা ও ৮০ বছরের বেশি বয়সী লোকজন।
যুক্তরাজ্যে বেড়ে চলা করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশটির সরকার টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করছে। করোনার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে এই টিকা দেওয়া শুরুর ঘটনাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত বলে বর্ণনা করেছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক। কারণ, টিকা করোনার সংক্রমণ রোধে সহায়তা করবে। ফলে, জারি থাকা বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে।
গতকাল রোববারও যুক্তরাজ্যে নতুন করে ৫০ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়। দেশটিতে করোনার নতুন একটি ধরন ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ রয়েছে। কারণ, এ ধরন আগের ধরনের চেয়ে বেশি সংক্রামক।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, করোনার দ্বিতীয় টিকা এই মহামারি সমাপ্তির ব্যাপারে সবার মধ্যে নতুন প্রত্যাশার জন্ম দেবে বলে তিনি আশা করেন। তবে যুক্তরাজ্যের লোকজনকে সামাজিক দূরত্ব বজায়সহ করোনার বিধিবিধান মেনে চলা অব্যাহত রাখতে আহ্বান জানান তিনি।
গত ৩০ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য প্রথম অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) এই অনুমোদন দেয়। এমএইচআরএর এই অনুমোদনের অর্থ হলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা নিরাপদ ও কার্যকর।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত করোনার টিকা উৎপাদন করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। যুক্তরাজ্য সরকার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ১০০ মিলিয়ন ডোজের আগাম অর্ডার করে রেখেছে।
অনুমোদনের আগেই যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে ভূমিকা নেবে। কারণ, ফাইজার-বায়োএনটেকের তুলনায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সংরক্ষণ, পরিবহন ও প্রদান অনেক বেশি সহজ হবে।
ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। অন্যদিকে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সাধারণ রেফ্রিজারেটরেই সংরক্ষণ করা যায়।
ফাইজারের মতো অক্সফোর্ডের টিকারও দুটি করে ডোজ নিতে হবে। ফাইজারের ক্ষেত্রে দুই ডোজের মধ্যে ব্যবধান তিন সপ্তাহ। অক্সফোর্ডের ক্ষেত্রে এই ব্যবধান চার সপ্তাহ।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য গত ২ ডিসেম্বর ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। গত ৮ ডিসেম্বর দেশটিতে এ টিকার প্রয়োগ শুরু হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশ ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা অনুমোদন দিয়ে তার প্রয়োগ শুরু করে।
গতকাল ভারত সরকার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দিয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা ভারতে তৈরি করছে দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউট।