এসব বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন আইন-২০২০’ নামে একটি খসড়া আইন চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে খসড়া আইনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত চেয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
খসড়া আইনে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে করপোরেশনকে শেয়ার, বন্ড ও ডিবেঞ্চার বা মিউচ্যুয়াল ফান্ড কিনে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তহবিল সংগ্রহে সেখান থেকে অর্থও তুলতে পারবে করপোরেশন।
খসড়া আইনের ধারা ২৩ এ করপোরেশনের ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায়ে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণসহ কর্তৃত্ব নিয়ে নিতে পারবে। ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ব্যবসায়ের সম্পূর্ণ বা আংশিক বিক্রয় বা লিজ দিতে পারবে। বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানটি চাইলে ঋণগ্রহীতার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ কিংবা পুনর্গঠন করতে পারবে। কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি হলে করপোরেশনের এক বা একাধিক এজেন্ট প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন।
আর যদি কোনো ব্যক্তি ঋণ খেলাপি হয় তাহলে এজেন্ট প্রশাসকের ক্ষমতা পাবে। ঋণগ্রহীতার বকেয়া নিষ্পত্তি করার ক্ষমতাও দেয়া হচ্ছে করপোরেশনকে। এছাড়া জামানতের দখল, সুরক্ষা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে লিজ বা বিক্রয়ের ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা পাচ্ছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠান। ঋণগ্রহীতার ঋণের সম্পূর্ণ বা যে কোনো অংশ শেয়ারে রূপান্তর করতে পারবে। করপোরেশন নিজ নামে মামলা দায়ের করতে পারবে।
শুধু দেশের নয়, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ঋণ খেলাপি হলে সে ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা এবং মামলা করতে পারবে করপোরেশন। যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ করপোরেশন কিনবে সেগুলো আদায়ের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা এবং মামলায় পক্ষ হতে পারবে। আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ক্ষমতা বা অধিকার পাবে করপোরেশন।
খসড়া আইনের ধারা ৭ এবং ৮ এর মধ্যে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশনের শেয়ার মূলধন এবং পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে বলা হয়েছে। ধারা ৭ মোতাবেক করপোরেশনের অনুমোদিত শেয়ার মূলধন হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ৫০০ কোটি সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত হবে। সরকার সময় সময় অনুমোদিত শেয়ার মূলধন বৃদ্ধি করবে। করপোরেশনের পরিশোধিত শেয়ার মূলধনের পরিমাণ হবে তিন হাজার কোটি টাকা। সরকার চাইলে তা আরও বাড়াতে পারবে। আর ধারা ৮ এ বলা হয়েছে, তহবিল সংগ্রহের জন্য করপোরেশন প্রয়োজনে পুঁজিবাজারে বন্ড ইস্যু করতে পারবে।
এছাড়াও পুঁজিবাজারের স্বার্থে তথা তহবিলের জন্য করপোরেশন বন্ড ও ডিবেঞ্চার, শেয়ার বা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারবে। একই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লাভজনক যে কোনো খাতেও এটি বিনিয়োগ করতে পারবে। করপোরেশন তহবিল বা ফান্ড গঠন বা বাড়াতে এক বা একাধিক, দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগকারী কিংবা ফান্ড/ফান্ড ম্যানেজারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে। করপোরেশন চাইলে এক বা একাধিক সাবসিডিয়ারি কোম্পানিও গঠন করতে পারবে।
পদাধিকার বলে করপোরেশনের চেয়ারম্যান হবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব। এর পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ হবে তিন বছর। এক তৃতীয়াংশ সদস্য উপস্থিত হলেই এর কোরাম পূর্ণ হবে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ আইন প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যে কোনো দেশের অর্থনীতির জন্যই খেলাপি ঋণ খারাপ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ আইন খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। ব্যাংক যেসব খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারবে না সেগুলো অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আদায় করবে। এতে খেলাপি ঋণ অনেক কমবে। বাড়বে খেলাপি ঋণ আদায়। এজন্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশকে বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে। আমরা এ আইন করতে গিয়ে মালয়েশিয়া, কোরিয়া, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডের আইন পর্যালোচনা করেছি। ২০০২ সাল থেকে এ চার দেশ খেলাপি ঋণ আদায়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট আইন দিয়ে সফল হয়েছে।
এ 'এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন' আইন প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘সরকারের পলিসি তো পরস্পরবিরোধী। একদিকে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। আবার অন্যদিকে এ উদ্যোগ নিয়ে তাদের ধরার চেষ্টা করছে। তবে আমার শঙ্কা হলো, এ আইন পাস হলে নিঃসন্দেহে আদালতে রিট হবে এবং আইনটি স্থগিত হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, তবে সার্বিকভাবে খেলাপিদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার। সরকার এর মাধ্যমে যে উদ্যোগ নিচ্ছে, এটি ভালো। তবে এর আগে রাজনৈতিক কারণে ঋণ দেওয়া-নেওয়া বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি আইন পাসের আগে অন্যান্য দেশে এ ধরনের আইনে কী বলা হয়েছে, তা দেখা উচিত।