বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেনের সই করা এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
এজেন্ট কমিশন শূন্য শতাংশ নির্ধারণ করায় সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মুনাফা বড় অংকে বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ১৫ শতাংশ কমিশন এজেন্টদের জন্য নির্ধারিত থাকলেও, কোম্পানিগুলো মূলত এটি গ্রাহকদের দিতো। এতে কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলে। কমিশন এজেন্ট তুলে দেয়ার কারণে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর মুনাফা বেড়ে যাবে।
নির্দেশনায় আইডিআরএ জানিয়েছে, ‘নন-লাইফ বীমাখাতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও কমিশন বিষয়ে শৃঙ্খলা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত হচ্ছে না বিধায় এ খাতে শৃঙ্খলা আনয়নের স্বার্থে বীমা আইন, ২০১০ এর অধীনে বীমা এজেন্ট নিয়োগ ও নিবন্ধন প্রবিধানমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত নন-লাইফ বীমাখাতে কমিশন সংক্রান্ত বিষয়ে নিম্নোক্ত নির্দেশনা প্রদান করা হলো।’
> নন-লাইফ (সাধারণ) বীমাখাতে ব্যবসা অর্জন বা সংগ্রহের বিপরীতে ১৫ শতাংশ বীমা এজেট কমিশন প্রদান সংক্রান্ত সার্কুলার (নং নন-লাইফ ৩২/২০১২, তারিখ ১ এপ্রিল ২০১২) এবং নন-লাইফের কমিশন হার সংক্রান্ত জারি করা অন্যান্য নির্দেশনাবলী পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হলো।
> নন-লাইফ বীমাখাতে ব্যবসা অর্জন বা সংগ্রহের বিপরীতে বীমা এজেন্ট কমিশন ১৫ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।
> উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা কর্মকর্তাদের সংগ্রহ করা প্রিমিয়ামের শতকরা হারে দেয়া যাবে না। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাদে সকল উন্নয়ন কর্মকর্তার নিয়োগপত্রে সংশ্লিষ্ট বীমাকারীর পে-স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা উল্লেখ ও প্রদান করতে হবে।
> সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা কর্তৃপক্ষের সার্কুলার (নন-লাইফ ৬৪/২০১৯)-এর তিন নম্বর দফায় উল্লেখ করা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের জন্য নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ ব্যাংক হিসাবে ট্রান্সফার বা অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে দিতে হবে।
> উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা সংক্রান্ত মাসিক প্রতিবেদন পরবর্তী মাসের ৭ তারিখের মধ্যে নির্ধারিত ছকে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে বীমা খাতের নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আইডিআরএ গঠিত হওয়ার পর ২০১২ সালেই প্রজ্ঞাপন জারি করে এজেন্ট কমিশনের হার ১৫ শতাংশ বেধে দেয়া হয়েছিল। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বীমা মালিকদের মধ্যে দেখা দেয়া বিরোধের কারণে তা মুখ থুবড়ে পড়ে।
এতে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর এজেন্ট কমিশন নিয়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খলাও দেখা যায়। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে কোনো কোনো কোম্পানি ৭০ শতাংশ পর্যন্তও কমিশন দিতে থাকে। যা এজেন্টের বদলে চলে যায় গ্রাহকদের পকেটে। যা সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন পক্ষ থেকে এর সমালোচনাও করা হয়।
দীর্ঘ আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত বছরের ১৮ জুলাই আইডিআরএ, বিআইএ এবং সবগুলো সাধারণ বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আইডিআরএ চেয়ারম্যান সাধারণ বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য ১৫ শতাংশের বেশি এজেন্ট কমিশন দেয়াকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। বৈঠকের সিদ্ধের অংশ হিসেবে ১ আগস্ট থেকে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোকে এজেন্ট কমিশনের সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশ কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দেয় আইডিআরএ।
এরপর ২৫ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নরের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইডিআরএ এবং বিআইএর প্রতিনিধিদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ১৫ শতাংশের অধিক কমিশন বন্ধ এবং আইডিআরএ সার্কুলার অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত সব বিষয়ে সহযোগিতার সম্মতি দেন।