অপ্রকাশিত প্রতিবেদনটির নথিপত্রে দাবি করা হয়েছে, বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার হাতে কয়েক হাজার সুপ্রশিক্ষিত হ্যাকার রয়েছে, যারা দক্ষিণ কোরিয়াসহ অন্যান্য দেশের বিভিন্ন কোম্পানি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গবেষকদের ওপর হামলা চালায়। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খরচ জোগাতে গত দুই বছরে প্রায় ৩০ কোটি ডলার চুরি করেছে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা। মূলত বিভিন্ন সাইবার হামলার মাধ্যমে ওই মূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করেছে তারা।
জাতিসংঘের ওই নথিতে বলা হয়, তাদের কাছে এক সদস্যরাষ্ট্র অভিযোগ তুলেছে যে ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তাদের অন্তত ৩১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার চুরি হয়েছে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ থেকে ২৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির বিষয়টিও তদন্ত করে দেখছে জাতিসংঘের একটি প্যানেল। এতে পিয়ংইয়ংয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা, তারা তা খতিয়ে দেখছে। তার এক মাস পর অন্য একটি সাইবার হামলায় ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার চুরি হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্ত, হামলার ধরণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে মনে হচ্ছে, এ হামলার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার সাইবার যুদ্ধের সক্ষমতা ২০১৪ সালে বৈশ্বিক মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসে। তখন তারা সনি পিকচারস এন্টারটেইনমেন্ট হ্যাক করেছিল। উত্তর কোরীয় নেতা কিমকে নিয়ে ‘দি ইন্টারভিউ’ নামে একটি ব্যঙ্গাত্মক সিনেমা নির্মাণ করার প্রতিক্রিয়ায় এই সাইবার হামলা চালানো হয়েছিল। আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য হ্যাকিংয়ের সক্ষমতা কাজে লাগাচ্ছে বলেও পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং তাইওয়ানের ফার ইস্টার্ন ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৬ কোটি ডলার চুরির সঙ্গেও ঝুলছে উত্তর কোরিয়ার নাম।
মহামারী শুরুর পর থেকে বিটকয়েনসহ অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাইবার হামলা বাড়াচ্ছে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা।
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদের শেষ দেড় বছরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং- উনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়। কিন্তু সেগুলো কোনো ধরনের ইতিবাচক ও টেকসই ফল ছাড়াই শেষ হয়।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরো দাবি করা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া ফিসাইল (একটি পারমাণবিক উপাদান) উৎপাদন করেছে, পারমাণবিক স্থাপনা চালু রেখেছে এবং নিজেদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর উন্নয়নও ঘটিয়েছে। একই সময় এসব কর্মসূচির জন্য বিদেশে উপকরণ ও প্রযুক্তির খোঁজও অব্যাহত রেখেছে তারা।
প্রতিবেদনে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলেছেন, একটি দেশের ধারণা, উত্তর কোরিয়া বর্তমানে যেকোনো পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে পারমাণবিক যন্ত্রাংশ জুড়ে দিতে ‘খুবই সক্ষম’। ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে উত্তর কোরিয়া ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, বিভিন্ন জটিল যন্ত্রাংশ আদান-প্রদানসহ বেশকিছু কার্যক্রম চালু করেছে ইরান-উত্তর কোরিয়া। ২০২০ সালেই দুই দেশের মধ্যে নৌপথে বিভিন্ন পণ্য দেয়া-নেয়া হয়েছে।