ড. জোহার আত্মদান সামরিক শাসক আইয়ুব শাহীর পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল। চলমান গণআন্দোলন রূপ নিয়েছিল গণঅভুত্থ্যানে। জোহা হত্যার খবর বিদ্যুৎ বেগে ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে সর্বস্তরের জনতা আইয়ুব শাহীর সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে।
জোহা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের রিডার। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশের ন্যায় উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার চেষ্টা করে। আইয়ুব শাহীর স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের আগলে রেখেছিলেন জোহা। নিজ ছাত্রদের জীবন রক্ষায় অকুতোভয় এই শিক্ষক পাক হানাদার বাহিনীর বন্দুকের সামনে দাঁড়ান। ছাত্রদের রক্ষায় এগিয়ে আসায় পাক বাহিনী তাকে গুলি করে হত্যা করে। সেদিন থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ড. জোহার স্মরণে দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করেছে।
ড. শামসুজ্জোহার সংক্ষিপ্ত জীবনী
১৯৩৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ড. শামসুজ্জোহা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৪৮ সালে বাঁকুড়া জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ক্রিশ্চান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯৫৩ সালে স্নাতক ও ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে অর্ডিন্যান্স কারখানায় শিক্ষানবিশ সহকারী কারখানা পরিচালক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। এরপর লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে যোগ দেন। শহীদ হওয়ার সময় তিনি স্ত্রী নিলুফা জোহা ও এক কন্যাসন্তান রেখে যান। দীর্ঘদিন ধরে তারা আমেরিকা বসবাস করছেন। এখন তারা সেখানকার নাগরিক হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।