করোনা মহামারীর কারণে গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে বড় আকারের সংকোচন হলেও দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায় চীনের অর্থনীতি। দ্বিতীয়ার্ধে চাঙ্গা অর্থনীতির কারণে ইউরোপীয় পণ্যের চাহিদা বেড়েছে চীনে। গত বছর প্রবৃদ্ধি অর্জন করা একমাত্র প্রধান অর্থনীতি চীনে ইউরোপীয় গাড়ি ও বিলাসবহুল পণ্যের চাহিদা বেড়েছিল। এছাড়া চিকিৎসা পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিতে ইউরোপে রফতানি বেড়েছে চীনের।
ইইউর পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্টেট বলছে, ২০২০ সালে ইউরোপের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার ছিল চীন। আমদানি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং রফতানি ২ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধির জেরে যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে ইইউর প্রধান বাণিজ্য অংশীদার হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন।
চীনে ইইউর রফতানি ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ১০ হাজার ২৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে চীন থেকে আমদানি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার।
আইএনজি জার্মানির অর্থনীতিবিদ কারস্টেন ব্রজেস্কি গতকাল সিএনবিসিকে জানান, চীনের সঙ্গে ইইউর শক্তিশালী বৈদেশিক বাণিজ্যের কারণ হচ্ছে অঞ্চলটির মহামারী থেকে শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো। ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান অর্থনীতিগুলো যখন মন্দায় ধুঁকছে, তখন প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে চীন, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি অর্থনীতি।
ইউরোস্টেটের প্রতিবেদনটি গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত চীনের উপাত্তের প্রায় কাছাকাছি। গত মাসে চীন প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক উপাত্তে বলা হয়, ২০২০ সালে ইইউ-চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৬৯ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
গত সোমবার প্রকাশিত ইউরোস্টেটের উপাত্তে দেখা গেছে, চীনের সঙ্গে ইইউর বাণিজ্য ঘাটতি ১৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইইউর বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য ছিল কিন্তু গত বছর উভয় দেশের সঙ্গেই বৈদেশিক বাণিজ্য সংকুচিত হয়েছে। ইউরোস্টেট বলছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমদানি কমেছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং রফতানি কমেছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। গত বছর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের কারণে ট্রান্সআটলান্টিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর ইইউর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বাণিজ্য হয়েছে ৬৭ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ২০১৯ সালে যেখানে হয়েছিল ৭৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
ইইউ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়ানো ব্রিটেন ছিল জোটটির তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ইউরোস্টেট বলছে, গত বছর যুক্তরাজ্যে ইইউর রফতানি ১৩ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে আমদানি কমেছে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জো বাইডেন কীভাবে পুনর্মূল্যায়ন করবেন তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু ইইউ ও চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক গভীরতর হচ্ছে। উভয় পক্ষই তাদের বিনিয়োগ চুক্তি সংশোধন ও অনুমোদন করছে। এর ফলে চীনের বাজারে অধিকতর সুযোগ-সুবিধা পেতে যাচ্ছে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো।
চায়না সিকিউরিটিজ রেগুলেটরি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ফ্যাং সিংহাই চীনভিত্তিক ইংরেজি সংবাদমাধ্যম সিজিটিএনকে জানান, চুক্তির ফলে ইউরোপ ও চীন উভয়ই একে অন্যের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজার উন্মুক্ত করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২০ সালের নাজুক দশা কাটিয়ে ২০২১ সালে চাঙ্গা হয়ে উঠবে বিশ্ব অর্থনীতি।
আইএইচএস মার্কিট বলছে, গত বছর বৈশ্বিক বাণিজ্য ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়ে ১৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হতে পারে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। সূত্র বিবিসি ও সিএনবিসি।