আজ মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) খেলাপিদের তালিকা আদালতে জমা দেয়ার কথা রয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঋণের নামে ১ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বর্তমানে যার প্রায় পুরোটাই কুঋণ। আদালতের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়োগ দেয়া বিশেষ নিরীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান একনাবিন এই নিরীক্ষার কাজ করেছে। প্রতিবেদনে বেশ কিছু প্রভাবশালীর নাম উঠে এসেছে। একই ব্যাক্তি বার বার ঋণের নামে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
একনাবিনের প্রতিবেদন অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণের স্থিতি দাড়াঁয় ১ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে মেয়াদী আমানত ৯৯১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, লিজ অর্থায়ন ১০৮ কোটি ৪ লাখ, আবাসন ঋণ ৩৩ কোটি, বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ ২৬ কোটি এবং অন্যান্য সম্পদ ৬৭৭ কোটি টাকা। আর সবমিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রভিশন ঘাটতি ৪১৬ কোটি টাকা। পরিচালকদের মধ্যে বিশ্বজিৎ কুমার রায়, উজ্জল কুমার নন্দী, আরেফিন শামসুল আলামিন, ক্যাপ্টেন (অব.) এম মোয়াজ্জেম হোসেন, মতিউর রহমান এবং কবির উদ্দিন মিয়া, সিরাজুল ইসলাম মোল্লার বেশি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আলোচ্য সময়ে পরিচালকরা বোর্ড মিটিংয়ের সম্মানী হিসাবে প্রায় ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন।
উল্লেখ্য দেশের আর্থিকখাতে বহুল সমালোচিত পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের বর্তমান পরিচালকদের যোগসাজশে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী, বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। ইতিমধ্যে সুর চৌধুরী ও শাহ আলমের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এছাড়াও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার, কোম্পানির চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সাবেক এমডি ড. ইউসুফ খান, বর্তমান এমডি সামি হুদা, শেখর কুমার হালদার, সুকুমার মৃধা, অমিতাভ অধিকারী ও কাজী আহমেদ জামাল। এরা সবাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমের ছত্রছায়ায় অবৈধ ও দুর্নীতির মূল কাজগুলো করেন। এ একই ব্যক্তিরা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফাস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানিসহ অনেক কোম্পানির পরিচালক হিসেবে বহাল আছেন, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের পরিপন্থি।
একনাবিনের প্রতিবেদন অনুসারে পরিচালকদের সুপারিশে যে সব ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হয়েছে এরমধ্যে রয়েছে-এসএ এন্টারপ্রাইজ, বিশ্বজিৎ কুমার রায়, আরেফিন শামসুল আলামিন, মতিউর রহমান, ইন্দ্রজিৎ কুমার রায়, শিল্পী রানী রায়, গুলজার হোসেন রাজ, আরএমএস ফুড প্রোডাক্ট, জেনিথ হোল্ডিংস লিমিটেড. জেইফার হোল্ডিংস লিমিটেড, রনবীর কুমার রায়, সাগর ট্রেডিং, শপার ওয়ার্ল্ড লিমিটেড, ম্যাগলিফিসিও ইটালিনো, ইউরো ট্রেডিং, সিমফোনি ট্রেডিং, মতিউর রহমান, ফুয়াদ ষ্পিনিং এবং এসএ ষ্পিনিং উলেখযোগ্য।
প্রতিবেদনে ৩ শতাধিক ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর অধিকাংশই কুঋণ। এসব খেলাপির মধ্যে রয়েছে- ডিজিটন অডিট লিমিটেড, স্মরনিকা গার্মেন্টস লিমিটেড, স্মরনিকা ফ্যাশন ওয়্যার, এলআর ইন্টারন্যাশনাল, নুরুল আমিন খান, হাবিব উদ্দিন, সিয়াম ডিজাইন এম্পব্রয়ডারী, খোন্দকার আব্দুল মুবিন, মেসার্স মিলন এন্টারপ্রাইজ, শহিদুল ইসলাম, সাইফুদ্দিন মাহমুদ, সিরাজুল ইসলাম, এলএন রিসার্স অ্যানলাইসিস, মেসার্স মার্লিন বীজনেস ইন্টারন্যাশনাল, মুফিদ ইসলাম, এম, সিরাজুল ইসলাম, মেসার্স গিফট প্যালেস, শাহ আলম, মেসার্স এম্প্রয়ার ফুড, কিউসি হোল্ডিংস, ক্রিয়েটিভ ইন্টারফেস, মশিউর রহমান রনি, কেএম খায়রুল বাশার, ঢাকা ডাইং অ্যান্ড মেনুফ্যাকচারিং কোম্পানি বিশ্বজিৎ কুমার রায়, দিলারা আফরোজা, আব্দুস সালাম দেওয়ান, জয়সুন ফার্মা, শেখ নুরুল ইসলাম, শোভা ইন্টারন্যাশনাল, ফোনিক্স হ্যাচারী লিমিটেড, মাহবুব মুসা, ওফাজ উদ্দিন ষ্পিনিং মিল, ডিচি নিটিং, ফারজানা মজুমদার, তানিয়া বেগম, বিল্ড ট্রেড ফয়েলস লিমিটেড, হাজী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মের্সাস জিএম সীফুড প্রসেস, মেসার্স সিমকন ইন্টারন্যাশনাল, মো. শফিকুল ইসলাম ভুইয়া, শিরিন আক্তার, মেসার্স এক্সিলেন্ট বিল্ডার্র লিমিটেড, বিক্রমপুর কার ডেকোরেশন, টিপু সুলতান, নাহার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং, মেসার্স হিল ফার্মা, জিফার হোল্ডিং, জেনিথ হোল্ডিং, মেসার্স জেডি এন্টারপ্রাইজ, ষ্পিন অ্যান্ড ওয়েব, মেসার্স এম আর ডাইং অ্যান্ড ফিনিসিং, মো. সাঈদ হোসাইন, এম কাইয়ূম, স্টার নিটওয়্যার প্রা. লিমিটেড, গোল্ডেন বাংলা ইন্ডাষ্ট্রি পার্ক লিমিটেড, সাবিহা মতিন, নাসির উদ্দিন, সাইদুর রহমান, কায়জার খান, তোফাজ্জল হোসেন, মেসার্স নাহার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং, ক্যাপ্টেন রেজাউর রহমান, মিসেস নাফিসা আলী, মেসার্স অহনা জুলেয়ার্স, শাসমুল হক, মিসেস আফরোজা হক, ইনট্রকো সিএনজি, দিদারুল গনি, সামিউল হক, শ্রীদম দাস, মেজবাহ উদ্দিন মাহমুদ, জামিল উদ্দিন ভ‚ঁইয়া, গ্রেট ওয়ালস ল্যান্ড প্রপার্টি, কর্নপুর অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি, মাজহারুল হক, দাহি উল হক, আব্দুল বাসেত, মাসুদুল আলম, বাঁধন ফুড ইন্ডাস্ট্রি, শাহরিয়ার হাসান উল ইসলাম, আফরোজা ইসলাম, ন্যাশনাল হ্যাচারি, গুলজার হোসেন রাজ, গাজীপুর এন্টারপ্রাইজ, শাইলা নুরুল্লাহ, সোহাইল হাসান নুরুল্লাহ, পারটেক্স জুট মিলস, ইন্সটিটিউট অব ট্যুরিজম, এলাইড সোলার এনার্জি, মেসার্স ফিদা এন্টারপ্রাইজ, আরএমএস ফুড প্রডাক্টস, ইন্সটিটিউট অব ট্যুরিজম হোটেল, শরিফ আশরাফুল মতিন, সিনার্জিক বাংলাদেশ, মতিউর রহমান, ড. মো. রুহুল আমিন, মুক্তাগাছা অয়েল মিল, পিংকি চলচ্চিত্র, ক্যাপ. ওয়ার্ল্ড বিডি, দ্য প্যাট্রিয়ট, স্টিচেস ফ্যাশন হাউজ ও সচেতন হ্যান্ডিক্রাফট।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ক আসাদুজ্জামানা খান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী খেলাপিদের হাইকোর্টে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আজ ১৪৩ জন ও আগামী ২৫ তারিখে বাকি ১৩৭ জন খেলাপির হাজির হওয়ার কথা রয়েছে। দুই দিনে মোট ২৮০ জন খেলাপি আদালতে হাজিরা দেবেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির টাকা তারা কিভাবে ফেরত দেবেন সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি নেয়া হবে। প্রতিশ্রুতি ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আদায় প্রক্রিয়া শুরু হবে।’