আন্তর্জাতিক নারী দিবস- ২০২১ উপলক্ষে বুধবার (০৩ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের অধিকার ও কল্যাণ: নীতি বাস্তবায়নে সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা একথা বলেন।
গণসাক্ষরতা অভিযান ও অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে সিকিউরিং রাইটস ফর উইমেন ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স (সুনীতি) প্রকল্পের আওতায় মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কে. এম. আবদুস সালাম, সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, রাশেদা কে চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান, শাহীন আকতার ডলি, নির্বাহী পরিচালক, নারী মৈত্রী ও সদস্য, কনসালটেটিভ ফোরাম, সিকিউরিং রাইটস প্রজেক্ট, আবুল হোসাইন, ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী, গৃহকর্মী অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গৃহকর্মীবৃন্দ।
সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন পিনাস আক্তার, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ২০১৬ - ২০১৭ সালের শ্রম শক্তি জরিপ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের কর্মজীবি নারীদের একটি বড় অংশ (১.৬৯ মিলিয়ন মানুষ) গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত যাদের প্রায় ৯০% নারী। এই বিশাল জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তাদের অধিকার এবং শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কোন প্রাতিষ্ঠানিক নিরীক্ষণ ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত কার্যকর হতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার ষ্টাডিজ -বিলস পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, ২০২০ সালে (জানুয়ারী- ডিসেম্বর) মোট ৪৪ জন গৃহকর্মী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১২ জনের রহস্যজনক মৃত্যুসহ মোট ১৬ জন নিহত হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১২ জন। এছাড়া শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চরমভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ১২ জন, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন। এইসব ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট থানায় একটি করে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে কে. এম. আবদুস সালাম বলেন, সরকারি পর্যায়ে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫ নিয়ে যথেষ্ট কাজ হচ্ছে। বর্তমানে এ বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য সরকারের মনিটরিং সেল আছে। নীতিটির আওতায় শিশুশ্রমের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, করোনাকালে সরকার ২৩টি খাতে সহায়তা দিয়েছে এবং তার মধ্যে সর্বপ্রথম হল শ্রমজীবী মানুষের জন্য সহায়তা। তবে গৃহকর্মী সুরক্ষা কল্যাণ নীতিটি বাস্তবায়নে এখনও কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। বিষয়টিকে সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় আনার বিষয়ে তার মন্ত্রণালয় কাজ করে যাবে বলে জানান শ্রম সচিব।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, গৃহকর্মে নিয়োজিত রয়েছে একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। তাদের কথা আমাদের ভাবতে হবে এবং আমাদের প্রত্যেকের ঘর থেকেই সেটি আমাদের শুরু করতে হবে। গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫ বাস্তবায়নের অবস্থা কি, এটিকে আইনে রূপান্তর করা যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।
উপস্থিত অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, মো: আলতাফ হোসেন, উপসচিব, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ; নাজমা ইয়াসমিন, পরিচালক , বিল্স; শরীফুল হক, উপ-পরিচালক, এনএসডিএ, দিদারুল আলম চৌধুরী, পরিচালক, ইউসেপ বাংলাদেশ প্রমুখ।
সিকিউরিং রাইটস ফর ওমেন ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স (সুনীতি) প্রকল্পের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের নারী গৃহকর্মীর সার্বিক কল্যাণ সাধন করা। আর এ উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নারী গৃহকর্মীদেরকে তাদের অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠায় সংগঠিত করে তাদের জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার প্রয়াস চালাবেন। পাশাপাশি, গৃহকর্মকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাজ হিসেবে অন্তর্ভুক্তি ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়পূর্বক নীতি নির্ধারক, সরকার ও সমাজে গৃহকর্মের সম্মানজনক অবস্থান তৈরী করে দিতেও এ প্রকল্পটি কাজ করবে।