সমৃদ্ধ হয়েছে পশুপাখির সংখ্যা। জানা যায়, গত প্রায় ছয় মাসে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় যোগ হয়েছে একটি বাঘ, একটি গয়াল, তিনটি চিত্রা হরিণ, একটি মায়া হরিণ, চারটি মযূর, ১০টি টিয়া, ২০টি ঘুঘু, ছয়টি শালিক, চারটি ককাটিয়েল, একটি ঘোড়া, দুটি সজারু, ইন্দোনিশয়ার সাতটি মুরগি ও ২২টি অজগর সাপের বাচ্চা। তাছাড়া জেব্রা পরিবারে আসবে নতুন সদস্য। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ৬৬টি প্রজাতির ৬২০টি পশুপাখি আছে। তাছাড়া গত ১১ মাসে এক কোটি ৮৯ লাখ ৩ হাজার টাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ হয়েছে বলে জানা যায়। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘করোনাকালে চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকায় পুরো আঙিনা সবুজে স্নিগ্ধ রূপ নিয়েছে।
বৃক্ষ মেলেছে নতুন ডালপালা। প্রাণীর ঘরে এসেছে অতিথি। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে অনেকটা নতুনত্ব রূপ নিয়েছে চট্টগ্রামের একমাত্র এ চিড়িয়াখানাটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চট্টগ্রামবাসী নতুন রূপে চিড়িয়াখানাটি অবলোকন করতে পাবেন।’ তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে চিড়িয়াখানাটির ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। কেবল গত ১১ মাসেই চিড়িয়াখানার টিকিট বিক্রির এক কোটি ৮৯ লাখ ৩ হাজার টাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ হয়েছে।’
জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মানুষের বিনোদন, শিশুদের শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য নগরের খুলশির ফয়েজ লেকের পাশে ৬ একর জমির ওপর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করেন। দেশে প্রথমবারের মতো নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ইনকিউবেটরে অজগরের ২৬টি বাচ্চা ফোটানো হয়েছে এ চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানায় আছে দেশের একমাত্র দুর্লভ সাদা বাঘ। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আনা হয়েছিল একটি বাঘ ও একটি বাঘিনী। আছে জেব্রা, সিংহ, হরিণ, ভালুক, বানর, কুমির। আছে ন্যাচারাল মিনি এভিয়ারি (পক্ষীশালা)। ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৫ ফুট প্রস্থের পক্ষীশালায় আছে ৬ প্রজাতির ৩০০ পাখি। পাখির মধ্যে আছে, লাভ বার্ড ২০ জোড়া, লাফিং ডাভ ৫০ জোড়া, ফিজেন্ট ১০ জোড়া, রিংনেড পারোট ১০, কোকাটেইল ৫০ ও ম্যাকাও ১ জোড়া। শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে কিডস জোন। দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ পথগুলো।
ঋতুরাজ বসন্তে গাছে-গাছে এসেছে নতুন কুঁড়ি। নানা দেশ-বিদেশের পাখির কলতানে ভরেছে চারপাশ। তবে চোখ জুড়ে যায় চিড়িয়াখানার শেষ প্রান্তে এসে। রংবেরঙের লম্বা তিনটি সিড়িঁ বেয়ে গেছে উঁচু পাহাড়ের কোল ঘেঁষে। করোনায় ম্লান হয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সেজেছে নতুর রুপে। প্রায় ১০ দশমিক ২ একর জায়গা জুড়ে নতুন রূপে প্রস্তুত করা হয়েছে চিড়িয়াখানাকে। নতুন করে ৪ একর জায়গায় সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শেষ হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নগরের বিনোদন প্রেমীরা পরিবার পরিজন নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসছে। দর্শনার্থীদের মাঝে শিশু-কিশোর থেকে সব বয়সী মানুষই চিড়িয়াখানায় আসছে। তবে নতুন করে ৪ একর বাড়িয়ে করা দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ও জায়গাগুলো দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। দূর থেকে দেখে পলক জুড়িয়ে আপাতত স্বস্তি নিচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
জানা যায়, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় গত একবছরে যুক্ত করা হয়েছে একটি বাঘ, একটি গয়াল, তিনটি চিত্রা হরিণ, একটি মায়া হরিণ, চারটি ময়ূর, ১০টি টিয়া, ২০টি ঘুঘু, ছয়টি শালিক, চারটি ককাটিয়েল, একটি ঘোড়া, দুটি সজারু, ইন্দোনেশিয়ার সাতটি মুরগি ও ২২টি অজগর সাপের বাচ্চা। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ৬৬টি প্রজাতির ৬২০টি পশুপাখি আছে। এছাড়া নতুন আনা প্রাণীদের জন্য কোয়ারেন্টাইন খাঁচার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের একমাত্র নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ইনকিউবেটরের ব্যবস্থাও আছে এ চিড়িয়াখানায়।
এদিকে করোনার কারণে র্দীঘ কয়েক মাস বন্ধ ছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। গত ১৯ অগাস্ট চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন চিড়িয়াখানা খুলে দেয়। এর সাথে নতুন করে সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজও শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার পুরো সময়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। পূর্বে চিড়িয়াখানাটি ৬ একর জায়গা নিয়ে করা হলেও আরও ৪ একর বাড়িয়ে নতুনরূপে সাজানোর কাজ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে দুই হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের দৃষ্টিনন্দন দুটি সিঁড়ি, ২২ লাখ টাকায় নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে একটি বার্ড জোন, তৈরি করা হয়েছে নতুন একটি কিডস জোন, প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন সম্প্রসারিত অংশে দেওয়া হয়েছে সীমানা দেওয়াল। এ অবকাঠামো উন্নয়নের অর্থায়ন এসেছে কেবল চিড়িয়াখানার টিকিট বিক্রির টাকা থেকে।
চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, ‘সিঁড়িগুলো আরও ৬ মাস আগে করা হলেও এতোদিন রং করা ছিলো না। চার রকমের রং দিয়ে এবং আমাদের নিজস্ব ডিজাইনার দিয়ে কয়েকমাস ধরে সিঁড়ি রং করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিড়িয়াখানা বড় করা হচ্ছে। নতুন করে বাড়ানো জায়গাটি নকশা অনুযায়ী সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজ করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ওইখানে উঁচু করে সীমানা প্রাচীর করা হয়েছে। সিঁড়ির নিচের জায়গাতে প্রাণী রাখার জন্য আরও খাঁচা নির্মাণ করা হবে। এখানে পরবর্তীতে জিরাফ, জলহস্তী, উট ও ওয়াইল্ড বিস্ট সংযুক্ত করা হবে। তবে এর আগে বর্ধিত এ অংশে দর্শনার্থীদের জন্যে উন্মুক্ত করা হবে। এখন সিঁড়িতে রং করা প্রায় শেষ হয়েছে। বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে। তাই আমরা চাই খুব শীঘ্রই এটা উন্মুক্ত হোক। তবে আমরা কর্তৃপক্ষের আদেশের অপেক্ষায় আছি।’
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘চিড়িয়াখানার সীমানাভুক্ত জায়গাগুলোকে আমরা দৃষ্টিনন্দন করার চেষ্টা করছি। গত মার্চ থেকে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করে সৌন্দর্য বাড়াতে নান্দনিক দুটি সিঁড়ি করা হয়েছে।এখানেও প্রায় ৩০-৪০ লাখ টাকার কাজ করা হয়েছে। সিঁড়িতে রঙের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে এটি খুলে দেওয়া হবে। আমরা জেলা প্রশাসকের অনুমতির অপেক্ষায় আছি। তিনি যখন অনুমতি দিবেন তখনই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।’
এদিকে চিড়িয়াখানার দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা বলেন, ‘বর্তমানে চিড়িয়াখানায় তারা মোট ২১ জন কর্মচারী কাজ করছেন। চিড়িয়াখানার পরিসর বড় করা হয়েছে তবে লোকবল বাড়ায়নি কর্তৃপক্ষ। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে দরকার কমপক্ষে আরও দশজন। বর্তমানে যারা আছেন তারা চিড়িয়াখানার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে কাজ করেতে হচ্ছে।’
তবে জনবল সংকটের কথা অস্বীকার করে সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বিগত বছরের তুলনায় বর্তমানে পর্যাপ্ত জনবল রয়েছে। নতুন জায়গাতে কোন প্রাণীর খাঁচা আপাতত রাখা হবে না। তাই ওইখানে শুধুমাত্র ঝাঁড়ুদারের কাজ থাকবে।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের কথা শুনেছি। কখন এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে শীঘ্রই এটি উন্মুক্ত করা হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মানুষের বিনোদন, শিশুদের শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য নগরের খুলশীর ফয়ে’স লেকের পাশে ৬ একর জমির ওপর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করেন।