দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) ক্রিস্টোফার উইলসন বলেন, মার্কিন বায়াররা স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বায়ারদের চাহিদামাফিক বাংলাদেশ উচ্চ মানসম্পন্ন পোশাক তৈরি করছে।- খবর বাসসের
উইলসন বলেন, চীন এবং ভিয়েতনামের পর যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় সর্ববৃহৎ পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৬.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ অব্যাহত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উইলসন বর্তমানে ঢাকা সফর করছেন। তিনি বাংলাদেশ-মার্কিন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরামের ৫ম বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকা আসেন। বৃহস্পতিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠক শেষে তিনি জাতীয় সংবাদ সংস্থা বাসস’র সঙ্গে আলাপ করেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী দশ বছরে বাংলাদেশ-মার্কিন বাণিজ্য ভলিয়ম বেড়ে ২০১৯ সালে দ্বিগুণ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে মার্কিন শুল্কহার সহায়ক হচ্ছে কি-না অথবা বাধাগ্রস্ত করছে কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে উইলসন বলেন, আমরা তৈরি পোশাক খাতে আমদানি শুল্ক আরোপ করে থাকি। তবে বাংলাদেশি পোশাকের ওপর আরোপিত শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি হচ্ছে না।
উইলসন বলেন, চীন এবং ভিয়েতনামের ওপর আরোপিত শুল্কের সমপরিমাণ শুল্কই বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি কোনো বৈষম্য করা হচ্ছে না।
বাংলাদেশে উৎপাদিত পোশাকের ৯৫ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আমদানিকৃত তৈরি পোশাকের ওপর ১৫.৬২ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করছে।
উইলসন বলেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। এতে বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কাজ করছে। তবে তিনি বিলম্বিত কাস্টম পদ্ধতি, পুজি এবং মুনাফা প্রত্যাহরে নানা ঝুকি ঝামেলা এবং বিভিন্ন বাণিজ্য লাইসেন্স ইস্যুতে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের কথাও জানান।
মার্কিন এ কর্মকর্তা বলেন, বিনিয়োগের উত্তম পরিবেশ সৃষ্টি করতে এ ধরনের সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। এ ধরনের বিষয় ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলোর ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
উইলসন বলেন, টিকফা সমাপনি বৈঠকে এসব বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করা হয়েছে। তবে বৈঠকে ডব্লিউটিও রুল সংক্রান্ত ইনটেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি (আইপিআর) প্রশ্নে ঢাকার সাম্প্রতিক পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়।
দ্বিপক্ষীয় টিকফা সম্পকর্তি এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন এ কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্কে স্থিতিশিলতা বজায় রাখতে অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, জিএসপি সুবিধা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন থাকলেও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে ঢাকার দাবি প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে কিছু ঘাটতি থাকায় এটি করা হয়েছিল।
উইলসন বলেন, বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্কে জিএসপি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও জিএসপি ইস্যুতে বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সুবিধা থেকে কিছুটা বঞ্চিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের একক বৃহৎ রফতানিকারক দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একটি স্বল্পন্নোত দেশ হিসাবে বাংলাদেশ ২০০৫ সালের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) সিদ্ধান্ত অনুযায়ি ৯৭ শতাংশ পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করেছে।