আতঙ্ক নয়, সতর্ক থাকুন
ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে নোভেল করোনাভাইরাস। চিনের উহানে প্রাদুর্ভাব ঘটে COVID-19-এর। যা এখন ৭০টি দেশে ত্রাস হয়ে উঠেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই। সেরে ওঠার নিশ্চয়তাও নেই। কাজেই এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় আতঙ্কিত না হয়ে নিজেরা সতর্ক থাকা।
করোনাভাইরাস কী?
COVID-19 - CO-এর অর্থ করোনা (Corona), V-এর অর্থ ভাইরাস (Virus) আর D-এর অর্থ ডিজিজ (disease)। 2019 novel coronavirus-ই হল COVID-19। মারাত্মক সংক্রামক এই রোগ। ভাইরাস পরিবারের নয়া সদস্য এই করোনাভাইরাস।
কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ে COVID-19?
মানুষ থেকে মানুষেই ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। COVID-19 ভাইরাসে আক্রান্ত কারও হাঁচি বা কাশির সময়ে মুখ যদি না ঢাকেন তাহলে হাঁচি-কাশির সেই ছিটেফোঁটা থেকে ওই জায়গায় উপস্থিত কারও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে।
গবেষকদের পরামর্শ, এই রোগের লক্ষণ ধরা পড়ার আগেই অন্য কারও শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে COVID-19 ভাইরাস।
করোনার উপসর্গ
জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, এরপরে শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। প্রতি চারজনের মধ্যে অন্তত একজনের অবস্থা মারাত্মক পর্যায়ে যায় বলে মনে করা হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হালকা ঠান্ডা লাগা থেকে শুরু করে মৃত্যুর সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
শিশুদের উপর প্রভাব কী?
এটা একটা নতুন ভাইরাস। কাজেই শিশুদের উপর বা অন্তঃসত্ত্বাদের উপর এর প্রভাব কী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে যে কোনও বয়সের মানুষেরই এই রোগ হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা কম।
শিশুর সুরক্ষায় কী পদক্ষেপ?
১. সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যান। তবে এটা ফ্লু-এর সিজন। এটাও খেয়াল রাখবেন। করোনার উপসর্গ সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা ফ্লু-এর মতোই। কাজেই উদ্বিগ্ন না-হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাঠ দিন শিশুকে। বারবার হাত ধোয়ানোর অভ্যেস করুন। হাত ধোয়ার পর স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
৩. টীকাগুলি ঠিকমতো দিয়ে রাখুন। যাতে ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়াজনিত রোগগুলির সঙ্গে শিশুর শরীর যুঝতে পারে।
উপসর্গ দেখা দিলে কি বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাবেন?
১. করোনার উপসর্গ দেখা দিলে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২. অনেক লোকের সমাগম হয়, এমন জায়গায় পাঠানো থেকে বিরত থাকুন।
৩. স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে রাখুন। স্কুলে পাঠানো বন্ধ না-করে হাইজিন মেনটেইন করার কথা শেখান শিশুকে।
৪. হাঁচি বা কাশি পেলে টিস্যু পেপারে মুখ ঢাকতে বলুন। তারপর সেই টিস্যু পেপার যেন অবশ্যই শিশু ডাস্টবিনে ফেলে দেয়, তা নিশ্চিত করুন।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা ঠিক কতটা? এক ক্লিকে জানুন...
COVID-19 ছড়িয়ে পড়া কী ভাবে আটকাবেন এবং নিরাপদই বা থাকবেন কী ভাবে-
খুব সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলললেই সহজে নিরাপদ থাকা সম্ভব। জেনে নিন-
১. নিজের স্বাস্থ্যবিধি নিজেই সযত্নে মেনে চলুন।
২. এই সময়ে কারও সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার কথা মাথাতেই আনবেন না।
৩. নিজের চোখ, নাক এবং মুখ নিজেই ছোঁবেন না।
৪. কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য ভালো করে সাবান দিয়ে নিজের হাত ধুয়ে ফেলুন। CDC-র তরফে বলা হচ্ছে, বাথরুম যাওয়ার পর, খাওয়ার আগে এমনকী হাঁচি বা কাশির পরেও
হাত ধুয়ে ফেলুন। অ্যালকোহল-যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন, যাতে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকবে, যদি না সাবান এবং জল খুব শিগগিরই না পান।
৫. হাঁচিকাশির সময়ে নিজের নাক এবং মুখ টিস্যু পেপার দিয়ে ঢাকুন। আর সেই টিস্যু ব্যবহার করা হয়ে গেলে অতি অবশ্যই তা ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন।
৬. শরীর খারাপ লাগলে এই সময়ে কোনও মতেই বাড়ির বাইরে বেরোবেন না।
৭. যাঁদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে এই কয়েকটা দিন তাঁদের পাশে ঘেষবেন না। WHO-র তরফে বলা হচ্ছে যে, যিনি হাঁচছেন বা কাশছেন তার থেকে কমপক্ষে ২ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।
৮. রাস্তাঘাটে যত্রতত্র থুতু ফেলা বন্ধ করুন।
৯. রাস্তাঘাটের পশুদের থেকে দূরত্ব অবলম্বন করুন।
১০. কাঁচা মাংস বা অর্ধসিদ্ধ মাংস খবরদার খাবেন না এই সময়।
১১. আর এখনই যদি জ্বর এবং সর্দিকাশি খুব পরিমাণে দেখা দেয়, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখান।