শনিবার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির উদ্যোগে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত রচিত ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের প্রণেতা, প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক ও দার্শনিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এমেরিটাস অধ্যাপক ড. এটিএম নূরুল আমিন, অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ড. মিজানুর রহমান।
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, দেশের মানুষ ১৯৭১ সালে প্রাণপনে যুদ্ধ করেছেন অর্থনৈতিক সমতা, স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য। কিন্তু বর্তমানে কি দেখছি- এখানে শাসক গোষ্ঠি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে ভয় পায়, মানুষকে কষ্ট করে ভোট কেন্দ্রে যেতে দিচ্ছে না! আর এটাই সমাজের আসল রূপ।
বড় পুকুরিয়া কয়লা খনিতে শ্রমিকদের আটকে রাখায় তিনি প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে- তা একটি ঘটনাই প্রমাণ করে। তাহলো করোনাকালীন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে দীর্ঘ সাত মাস আটকে রেখে ৬০৪ জন শ্রমিককে কাজ করতে বাধ্য করেছে। খনির ভেতরে বিক্ষোভ মিছিলসহ অবস্থান কর্মসূচি করলেও কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেননি- এটাই হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকারের চিত্র।
প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক বলেন, সব মানুষের মধ্যে কম বেশি প্রবৃত্তি রয়েছে কিন্তু আমি এ বিশ^কে দেখি গৃহের ন্যায় আর সকল মানুষই আমার স্বজন।
তিনি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত রচিত ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র বইয়ের প্রশংসা করে বলেন, আবুল বারকাতের প্রত্যেকটি লেখা বই পড়েছি। কিন্তু এই বইটি উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখেছি আর যতটুকু বুঝার সেটুকু পড়েছি। তবে বলবো- তিনি এমন বই লিখেছেন যা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।’
আবুল বারকাত সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, রংপুরের একটি অনুষ্ঠানে আবুল বারকাত বক্তব্য রেখেছেন আমিও সেই অনুষ্ঠানে ছিলাম, তার বক্তব্য মস্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছি; সেই থেকে আবুল বারকাতকে চিনি। বারকাত এত জ্ঞানী মানুষ আমরা তথা (বাংলাদেশ) কি তাকে চিনতে পেরেছি? তার মেধার যথাযথ মূল্যায়ন কি করতে পেরেছি? তিনি বলেন, আদিবাসি নিয়ে বারকাত বই লিখেছে তবে আমি বলবো তুমি আরও আদিবাসিদের কাছে যেতে হবে। আমি এখনও সাওতালদের গ্রামে যাই। তবে আমি দেখিনি কোন সাওতালী কন্যাকে সাধারণ হিন্দু অথবা মুসলমান বিয়ে করতে।
ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছেন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমতার জন্য কিন্তু আমরা এখন সমাজে অসমতা দেখতে পায়। এগুলো দূর করতে হবে। জনগণের মতামতের স্বাধীনতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আবুল বারকাত বলেন, ত্রিশ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। এই ভাষাটি বিশে^র ৭ম ভাষা। তাই মানুষের কথার-বলার স্বাধীনতা আনতে হবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র-সমাজ-অর্থনীতি শোভন নেই। শোভন না হলে দেশ এখন অশোভন-বুঝতেই পারছেন। শোভন রাষ্ট্র গঠনে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।