গবেষকরা বলছেন, ধূমপান ফুসফুস রোগের কারণ। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ধূমপান ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আর এতেই মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গ হলো হালকা জ্বর, সর্দি ও কাশি। তবে এটি ফুসফুসকে আক্রমণ করে বসলে ঝুঁকি রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ফুসফুসের কার্যকারিতা ধরে রাখতে ধূমপান ছেড়ে দেয়া উচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে, অতীতের সার্স ও চলমান করোনাভাইরাসের মতো মহামারিতে শিশুরা অপেক্ষাকৃত কম আক্রমণের শিকার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার হয়েছেন বয়স্করা। তবে এর সঠিক কারণ এখনও জানতে পারেননি গবেষকরা।
তবে গবেষকরা এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে মনে করছেন, ধূমপান ও দূষণের কারণে এদের তরতাজা ফুসফুস এখনও সক্ষমতা হারায়নি। এবং এই বয়সে তাদের ডায়াবেটিস ও ক্রোনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিসেসের (সিওপিডি) মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস’স কিরবি ইনস্টিটিউটের বায়োসিকিউরিটি বিভাগের প্রধান রেইনা মকন্টায়ার। এই অধ্যাপক বলেছেন, ‘যাদের ফুসফুসজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই ভাইরাস খুবই নির্দয়।’
শুধু ধূমপান নয়, যেসব দমকল কর্মী দীর্ঘদিন ধরে নাবানল নেভানোর কাজ করছেন (বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া), তাদের জন্যও দুঃসংবাদ দিচ্ছে এই ভাইরাস।
বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল অস্ট্রেলিয়াকে রেইনা মকন্টায়ার বলেছেন, ‘যারা দাবানল নেভানোর সময় ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এখনও সুস্থ হননি, তাদের করোনাভাইরাসে অপেক্ষা বেশি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যাদের এ ধরনের সমস্যা নেই এবং ধোঁয়ার কারণে সৃষ্ট রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণাপত্র বা ডাটা নেই’-যোগ করেন অধ্যাপক রেইনা।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সনজয়া সেনানায়েক বলেছেন, ‘যদিও করোনাভাইরাস ও ধূমপানের মধ্য আমরা এখনও পর্যন্ত সরাসরি কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাইনি, তারপরও ধূমপান অন্যান্য সমস্যা তৈরি এবং করোনা মোকাবিলায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের রোগসহ অন্যান্য রোগের কারণ ধূমপান। আর এ ধরনের রোগ থাকলে করোনাভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।’
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত করা হয়। ডা. সেনানায়েক বলেন, ‘আমরা এখনও করোনাভাইরাসের সঙ্গে ধূমপানের যোগসূত্র খুঁজে পাইনি। তার মানে এই নয় যে, ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে না।’ এই গবেষক পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ধূমপান ছেড়ে দেয়া সবসময়ের জন্যই মঙ্গল।
তবে যারা ধূমপায়ী শুধু তারা নয়, দাবানল নেভানোর কাজে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োজিত দমকলবাহিনীর সদস্যদেরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার জোর ঝুঁকি রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দাবানলের ধোঁয়ায় পিএম২.৫ এর মতো শত শত ক্ষতিকর উপাদান থাকে। আর এই পিএম২.৫ কণা আড়াই মাইক্রোমিটার আকারের চেয়েও ক্ষুদ্র-মানব চুলের প্রস্থের শতকরা ৩ ভাগেরও ছোট। অথচ এই ক্ষুদ্র কণাই ফুসফুসের গভীরে বাধা বাঁধে এবং সেগুলো ক্ষতি করে।