বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর নগর ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ‘আজকে যখন বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে দেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে যখন আমরা জাতিসংঘের ফাইনাল রিকমেন্ডেশন পেলাম যে, বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ, তখন দেশকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, 'প্রথমে একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে দেশে একটি গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করলো আর তাদের বাতাস দিল বিএনপি-জামাত। আর আজ যখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হচ্ছে, বিদেশি মেহমানরা দেশে আসা শুরু করেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসার সময় হয়েছে, তখন আবার নতুন খেলা শুরু হয়েছে।’
‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্জনকে এবং এদেশের উন্নয়নের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিদেশি মেহমানদের সামনে দেশকে ম্লান করার ও দেশকে অস্থিতিশীল করার হীন উদ্দেশ্যে সুনামগঞ্জের শালনায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হয়েছে’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
সেইসাথে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, এই ধরনের ষড়যন্ত্র আগেও বহুবার হয়েছে, ঢাকা শহরে ষড়যন্ত্র করে কোরান শরীফে আগুন দেয়া হয়েছে, বায়তুল মোকাররমে আগুন দেয়া হয়েছে। সেই অপরাধীদের বিচার হয়েছে, বিচার চলছে। আজকেও যারা এধরণের গন্ডগোল পাকাতে চাইবে, তাদেরকেও কঠোর হস্তে দমন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ষড়যন্ত্র থেমে নেই এবং সেই কারণেই রাজশাহীতে মিনু আমাদের নেত্রীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে কথা বলে, সেই কারণেই ডা: জাফরুল্লাহ বলে, দেশে যদি কোনো কিছু হয়, তখন অনেককে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই কথার উদ্দেশ্য কি- অর্থাৎ ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র চলছে।’
‘আমাদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে, নেতা-কর্মীদের বলি, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সেইসাথে ক্ষমতায় থাকলে বিনয়ী হতে হবে’ বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
হাছান মাহমুদ এসময় পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকান্ডের সময় মেয়র ফজলে নূর তাপসের পিতা শেখ ফজলুল হক মণি এবং মাতা আরজু মনির মৃত্যুর কথা স্মরণ করলে সভায় ভাবাবেগজড়িত আবহ সৃষ্টি হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের রাত থেকেই পাঁচ বছর বাংলাদেশের উপর কি নির্যাতন-নিপীড়ন চলেছে! বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক-ভোটার সবাইকে নির্যাতন করা হয়েছিল যেন আমরা ঘুরে দাঁড়াতে না পারি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’
ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘পঁচাত্তরের পরে বিভিন্ন চক্র এ দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আজকে প্রমাণিত, বঙ্গবন্ধুকে মুছেে ফেলা যায়না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালি জাতির অন্তরের অন্তঃস্থলে বাস করে। যিনি স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, যিনি ইতিহাস রচনা করেছেন, তিনি চিরন্তন।’
আলোচনা সভায় বক্তব্য পর্বের পূর্বে ডিএসসিসির আওতাধীন হাসপাতাল ও মাতৃসদনে আজ জন্মগ্রহণকারী ২২ শিশুকে নাগরিক সম্মাননা প্রদান করা হয়।
পরে অতিথিবৃন্দ ও উপস্থিত সকলে ডিএসসিসির সঙ্গীত শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লেজার প্রদর্শনী ও বর্ণিল আতশবাজি উপভোগ করেন।