অন্যদিকে বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ৫১৭ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল দেশের ৫৯টি ব্যাংক। বিপুল এ ব্যয়ের ৯৬ দশমিক ২১ শতাংশই ছিল দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। সিএসআর খাতে ব্যয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ ১ শতাংশেরও অনেক কম, আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর ব্যয়ও ছিল নামমাত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিএসআর খাতে ৪৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার এ বিপুল ব্যয়ের ৯৬ দশমিক ৬৯ শতাংশই দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যয় ৪৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ ১ শতাংশেরও অনেক কম; তারা ব্যয় করেছে মাত্র শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ বা ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর ব্যয় ১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বা মোট ব্যয়ের ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর নামমাত্র ব্যয় করেছে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংক; ১৫ হাজার টাকা।
২০২০ এর প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে সিএসআর খাতে ব্যয় কমেছে ব্যাংকগুলো সবচেয়ে ব্যয় করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে। এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ২৬৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৬০ শতাংশ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় প্রধানত শীতার্ত ও দরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ, বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এবং করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বা কর্মহীন জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ খাতে ব্যয় করা হয়। যার বেশিরভাগ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, ব্যাংকসমূহ কর্তৃক বিভিন্ন শাখা অফিস, এনজিও এবং সরকারি সংস্থার মাধ্যমেও শীতার্তদের কম্বল বিতরণ ও করোনায় দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
এরপর রয়েছে স্বাস্থ্যখাত। এ খাতে মোট ৭৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে ব্যাংক, যা মোট ব্যয়ের ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সারাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা প্রদান, চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার ও পিপিই সরবরাহ, করোনা আক্রান্ত মানুষের দ্রুত চিকিৎসার্থে অ্যাম্বুলেন্স ক্রয়, করোনা প্রতিরোধে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের চিকিৎসা সরঞ্জামাদি (শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত ডিভাইস, টেস্টিং কিটস ইত্যাদি) ক্রয়, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান ইত্যাদি খাতে ব্যাংকসমূহ কর্তৃক সিএসআর ব্যয় করা হয়েছে।
ব্যাংকগুলো তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে মোট ৪৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছে, যা মোট ব্যয়ের ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ খাতের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকগুলো কর্তৃক প্রধানত নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানকল্পে সিএসআর ব্যয় করা হয়েছে। তাছাড়া, বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ প্রদান এবং শিক্ষাখাতের অবকাঠামো উন্নয়নেও ব্যয় করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ ষান্মাসিকে (৬ মাস) শিক্ষাখাতে সিএসআর ব্যয়ের পরিমাণ পূর্ববর্তী ষান্মাসিকের তুলনায় কম।
অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়েছে ৪০ কোটি ১১ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। এ খাতে রয়েছে পেশাজীবীদের জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার ও পিপিই সরবরাহ, করোনা আক্রান্ত মানুষের দ্রুত চিকিৎসার্থে অ্যাম্বুলেন্স ক্রয়, টেস্টিং কিটস ইত্যাদি ক্রয়, হাসপাতাল/ ক্লিনিক নির্মাণ, ব্যক্তি পর্যায়ে দরিদ্র/অসহায় রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান ইত্যাদি।
এরপর রয়েছে সংস্কৃতি খাত। এই খাতে ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে, যা মোট ব্যয়ের এক দশমিক ৭৩ শতাংশ। অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ।
অন্যদিকে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ জুলাই ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ব্যয় করেছে ৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তারা সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা খাতে। এ খাতে তাদের ব্যয় ছিল ৩ কোটি ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মোট ব্যয়ের ৪১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশ ৬৯ শতাংশ। অবকাঠামো উন্নয়নে ৪৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা, শিক্ষাখাতে ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা, অন্যান্য খাতে ৩৮ লাখ ২০ হাজার টাকা, সংস্কৃতিতে ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা, পরিবেশে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।