১৯৭২ সালে ৭ কোটি মানুষের জন্য দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন যা পর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু এখন মানুষ বেড়েছে দিগুণের বেশি, আর আবাদি জমি কমেছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অথচ দেশে এখন কোন খাদ্য ঘাটতি নেই, খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাত ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের সফলতার মূল উৎস।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের এই সফলতা যথাযথ মনে হলেও আমাদের ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হবে। আগামী ২০৩৫ সালে দেশের জনসংখ্যা হবে ২০৬ মিলিয়ন আর আমাদের আবাদি জমির পরিমাণ পৌছাবে ১২ মিলিয়ন হেক্টরে। সীমিত জমি থেকে অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনের জন্য আমাদের অত্যাধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে যা আমাদের পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে ও জমির উর্বরতা নষ্ট করে দিবে। ফলে আমাদের উৎপাদনশীলতা কমে যাবে ও ফসলের পুষ্টিমান হ্রাস পাবে। যার ফলে আমাদের খাদ্য ঘাটতি ও কৃষি বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। যা আমাদের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি।
অন্যান্য দেশ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করন ও স্থিতিশীল কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অনেক আগে থেকেই টেকসই কৃষি উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। আমাদের ভবিষ্যতের হুমকি মোকাবিলার জন্য আমাদেরও এখন থেকেই প্রস্তুত হতে হবে। আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদ ব্যাবস্থার পাশাপাশি টেকসই কৃষি উন্নত অপরিহার্য হয়ে এসেছে। এক দিকে আমাদের বিপুল জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে অন্যদিকে আমাদের মাটির উর্বরতা ও ফসলের মান ধরে রেখে উৎপাদনশীলতা ঠিক রাখাতে হবে।
আমাদের কৃষির সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে তার দ্রুত সমাধান ও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানামুখী উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের আধুনিক কৃষি শিক্ষাক্রম ও গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি ব্যাবস্থা গড়ে তুলতে হবে, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে, গ্রামীণ কৃষি কে উন্নত প্রযুক্তির অধিনে নিয়ে আসতে হবে, কৃষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে ও সহজে কৃষকদের জন্য কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে, কৃষি বিপণন ব্যবস্থা ও সংরক্ষণাগার সহজলভ্য করার পাশাপাশি নানাবিধ কৃষি উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য টেকসই কৃষি উন্নয়নের বিকল্প নেই। আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে, মাটির উর্বরতা ঠিক রাখতে হবে, ফসলের মান যথাযথ রাখতে হবে আবার প্রাকৃতিক পরিবেশ কে ও ঠিক রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে কৃষি আমাদের খাদ্যের যোগান দিচ্ছে, অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি সচল রেখেছে এবং আমাদের বেচে থাকার জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কৃষির সাথে আমাদের আত্মার আত্মীয়ের সম্পর্ক। আমাদের কৃষির ঐতিহ্য ও রূপ বিকশিত করেছে বাংলার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দনকে। টেকসই কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে আমারা আমাদের কৃষির মান ও পরিবেশ ঠিক রেখে, চাহিদা ও উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে পারব এবং ভবিষ্যৎ কৃষির চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে উত্তরণ করে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে পারব।