সোমবার (১২ এপ্রিল) বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষে অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হেভেন। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন।
অন্যদিকে চারটি কর্মসূচিতে কোনো টাকা খরচ হয়নি। এর মধ্যে আছে করোনাকালে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ সম্মানী প্রদান; বয়স্ক নাগরিক, বিধবা, ডিভোর্সিদের ভাতা কর্মসূচি। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে সরকারের এসব কর্মসূচি মূল্যায়ন করে এসব মতামত দেওয়া হয়েছে।
বার্নার্ড হেভেন বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ আছে। এ ধরনের অনিশ্চয়তা কতটা দীর্ঘায়িত হয়, তার ওপর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নির্ভর করছে। লকডাউনের মতো কঠোর বিধিনিষেধে গরিব মানুষকে সহায়তা করাই বড় চ্যালেঞ্জ। গরিব মানুষকে চিহ্নিত করে তাঁদের সুরক্ষা দিতে হবে। কারণ, বিধিনিষেধে গরিব মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, লকডাউনের মতো কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ হওয়ায় অতীতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষ সবচেয়ে বেশি কাজ হারিয়েছেন। এমন গরিব মানুষকে সুরক্ষা দিতে খাদ্যসহায়তার পাশাপাশি নগদ সহায়তা নিশ্চিত করা দরকার। তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার চেয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের টিম কাজ করছে। তবে বাজেট সহায়তা প্রদানের বিষয়টি নির্ভর করে বাংলাদেশ আর্থিক খাতে কী ধরনের সংস্কার করছে, সেটার ওপর।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। প্রবৃদ্ধির কমা-বাড়া ব্যাপারটি তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। টিকাদান কর্মসূচির গতিপ্রকৃতি; চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ; বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কতটা হয়—এসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে বিশ্বব্যাংক প্রবৃদ্ধির ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করেছে।
প্রবৃদ্ধির ওঠানামার সীমার পূর্বাভাস সম্পর্কে মার্সি টেম্বন বলেন, এটি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস। নানা কিছু বিবেচনা করে প্রবৃদ্ধির অনুমান করা হয়। যেমন যেসব দেশে রপ্তানি পণ্য যাবে, সেখানকার পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, সেটাও বিবেচনায় রাখতে হয়। কোভিড পরিস্থিতির কারণে সবকিছুই খুব অস্থিতিশীল। সামনের দিনগুলোতে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। যদি সবকিছু ঠিকমতো চলে, তাহলে ৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, করোনার প্রথম ধাক্কা সামাল দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর প্রবৃদ্ধি ওঠানামা করতে পারে। যদিও সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতিতে ব্যাপক অনিশ্চয়তা আছে। চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে (গত জুলাই-ডিসেম্বর) ঢাকা ও চট্টগ্রামের শ্রমবাজারে আবার চাঞ্চল্য এসেছে, অনেকেই কাজে ফিরতে শুরু করেছে।
সংকটকালে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য কী করা দরকার—এমন প্রশ্নের জবাবে মার্সি টেম্বন বলেন, সবুজ, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির কৌশল ঠিক করতে হবে। করোনাকালে চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সচল থাকা সম্ভব হবে। এ ছাড়া স্থানীয় চাহিদা ও জোগানের সরবরাহব্যবস্থা আধুনিক করতে হবে।