ইতোমধ্যে করোনা ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে স্কুল-কলেজ, বন্দর ও সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে, তখন চীনের ম্যানুফেকচারিং খাতের জন্য দ্বিগুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসছে। করোনাভাইরাস আউটব্রেক ইস্যুতে চীনের অর্থনৈতিক ক্ষতির অঙ্ক কত তা এখনও আমরা জানি না। এটুকু সবাই জানে করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব ঠেকাতে জানুয়ারীতে চীন ৯ বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করেছিল। তবে আতঙ্ক কাটিয়ে চীনের পুরোমাত্রায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসার আগেই করোনা ভাইরাসের বিপর্যয় থেকে অকল্পনীয় মুনাফার সুযোগ হাতছাড়া করেনি চীন।
গত ৫ দশকে চীনের বিশাল অর্থনৈতিক উত্থানের পেছনে তার মুক্ত বাজার অর্থব্যবস্থায় পদার্পণ ও পশ্চিমা কপোর্রেট বিনিয়োগের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। একইভাবে চীনা বিনিয়োগকারী ও রফতানীকারকরা মার্কিন বাজার ও অর্থনীতিতে শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। নতুন শতাব্দীর শুরুর দিকে ২০০৩ সালে চীনে করোনা সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে চীনা অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুড়ে দাঁড়ানো চীনা অর্থনীতিকে আর একবারের জন্যও থমকে দাঁড়াতে হয়নি। এবার তা থমকে দাঁড়ানোই শুধু নয়, মুখ থুবড়ে পড়তে পড়তে আগের চেয়েও বেশি শক্তি নিয়ে ঘুঁড়ে দাঁড়ানোর পথে পা বাড়াতে শুরু করেছে।
প্রথমত: উহান করোনাভাইরাস নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়ার নেতিবাচক প্রচারনার কারণে ধস নামা চীনা পুঁজিবাজার থেকে পশ্চিমাদের পুঁজি প্রত্যাহারের হিড়িককে কোনো রকম সময়ক্ষেপণ ছাড়া কাজে লাগিয়েছে চীন সরকার। দর পতনের ধারাবাহিকতায়, হাজার হাজার বিলিয়ন ডলারের পুঁজি হারিয়ে হতাশ পশ্চিমা কর্পোরেট বিনিয়োগকারিরা তাদের শেয়ার ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই স্থানীয় বিনিয়োগকারিদেরকে এসব শেয়ার কিনে নিতে উৎসাহিত করে চীন সরকার। পতনশীল মূল্যে শেয়ার কিনে নেয়ার পরই চীনে করোনাভাইরাসের দৃশ্যপটে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে করোনা ছড়িয়ে পড়লে চীনের ম্যানুফেকচারিং খাত ও অর্থনীতি আবারো বিপুল সম্ভাবনাময় হয়ে দেখা দেয়ার পর পশ্চিমা বিনিয়োগকারিরা বুঝতে পারেন, তারা কত বড় বোকামি ও ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছেন। বড় বড় চীনা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে হাজার হাজার কোটি ডলারের পশ্চিমা বিনিয়োগ ছিল, এ সময়ে তারা বিপুল পরিমান পুঁজি হারিয়ে কম মূল্যে চীনাদের কাছে শেয়ার হস্তান্তরের পর এসব কোম্পানীতে চীনাদের একচ্ছত্র মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের পুঁজি হারানোর পরিমান কয়েক হাজার বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে জানা যায়।
দুর্যোগ ও দরপতনের সময়কে পুঁজিবাজারের সুযোগসন্ধানীরা কাজে লাগিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের সময়ে চীনা বিনিয়োগকারিরা বাজিমাৎ করে দেখিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এমনিতে তলানীতে বেশিরভাগ শেয়ারের মূল্য পেসভ্যালুর নিচে। তার উপর গুজব আতঙ্কে দরপতন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। এ অবস্থায় স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা পতনমূল্যে শেয়ার ক্রয় করতে পারে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশ সরকার দেশীয় বড় বড় বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে পারে।
আমাদের অর্থমন্ত্রী বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী। চাইলে বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী সুযোগটা নিয়ে চীনের মতো বাজিমাত করতে পারেন।
শরীফ নিজাম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, অর্থসংবাদ