বৃহস্পতিবার (৬ মে) বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত প্রাক্-বাজেট আলোচনায় সরকারের কাছে এসব দাবি জানায়। বিআইএ সভাপতি শেখ কবির হোসেন বিমা খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাজেটের প্রস্তাব তুলে ধরেন।
বিআইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো বিমাগ্রহীতা জীবনবিমার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিমা যুক্ত করে পলিসি করলে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এতে প্রিমিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে গ্রাহক স্বাস্থ্যবিমা করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। বিষয়টি স্বাস্থ্যবিমা প্রসারের জন্য অন্তরায়।
এ ছাড়া জীবনবিমা গ্রাহকের মুনাফার ওপর থেকে ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানায় বিআইএ। বিআইএ বলেছে, ভারতসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এ ধরনের গেইন ট্যাক্স আরোপের উদাহরণ নেই। ২০১৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী দেশের সব জীবনবিমা কোম্পানির পলিসি গ্রাহকদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স আরোপ করা আছে। ফলে দেশের সব জীবনবিমা পলিসি গ্রাহকদের সংখ্যা কমে গেছে। এটা উঠিয়ে না নেওয়া হলে জীবনবিমা খাতের ব্যবসা শুধু কমতেই থাকবে না, কোম্পানিগুলোর টিকে থাকাও কষ্টকর হবে।
বিআইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, পুনর্বিমা প্রিমিয়ামের কমিশনের ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য নয়। কিন্তু বিমা কোম্পানি প্রিমিয়াম নিলেই গ্রাহকের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হয়। এই ভ্যাট জমা হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। বিমা কোম্পানি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এই প্রিমিয়ামের একটি অংশ পুনর্বিমাকারীকে দিয়ে পুনর্বিমা নেয়। এতে বাড়তি খরচ হয়।
যেহেতু প্রিমিয়াম গ্রহণকালে সম্পূর্ণ প্রিমিয়ামের ওপর আইন অনুযায়ী ভ্যাট নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয় এবং এই প্রিমিয়ামেরই একটি অংশ পুনর্বিমাকারীকে দিতে হয়, সেহেতু পুনর্বিমা প্রিমিয়ামের কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের ভ্যাট নেওয়ার অর্থই হচ্ছে দ্বৈত কর নেওয়া।
বিআইএ আরও বলেছে, দেশের সব জীবন ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানির বিমা এজেন্টদের কমিশনের ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম কর পরিশোধের বিধান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশই আক্রান্ত। করোনার কারণে গত তিন মাস সব মাঠকর্মী গৃহবন্দী থাকায় কোনো কাজ করতে পারেননি। জনগণের কাছে গিয়ে প্রিমিয়ামও সংগ্রহ করতে পারেননি তাঁরা। এই অগ্রিম কর পরিশোধের বাধ্যবাধকতা অন্তত দুই বছরের জন্য স্থগিত করার দাবি জানায় বিআইএ।
পাঁচ বছর ধরেই বাজেটের আগে প্রায় একই দাবি করে আসছে বিআইএ। কিন্তু সরকার আমলে নিচ্ছে না। দাবিগুলো পূরণ না হওয়ার কারণ কি এই যে দাবিগুলো যৌক্তিক নয়? নাকি বিআইএ সরকারকে বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছে? সংগঠনটি বলেছে, আয়কর আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্যাংকগুলোর আয় বিমা কোম্পানিগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। ফলে করহার ব্যাংকের সমান হওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।
সংগঠনটি আরও বলেছে, বিমা কোম্পানিগুলো জনগণকে আর্থসামাজিক নিরাপত্তা দেয় বলে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই জীবনবিমা কোম্পানির করপোরেট কর নন-লাইফ বিমা কোম্পানি থেকে কম হয়। ফলে নন–লাইফ বিমা কোম্পানির করপোরেট করহার ব্যাংকের সমান না রেখে তা ৩৫ শতাংশ এবং জীবনবিমা কোম্পানির করহার ৩০ শতাংশ করটা বাঞ্ছনীয়।
পাঁচ বছর ধরেই বাজেটের আগে প্রায় একই দাবি করে আসছে বিআইএ। কিন্তু সরকার আমলে নিচ্ছে না। দাবিগুলো পূরণ না হওয়ার কারণ কি এই যে দাবিগুলো যৌক্তিক নয়? নাকি বিআইএ সরকারকে বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছে?
বিআইএর সভাপতি শেখ কবির হোসেন এসব প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সরকার একেবারে শুনছে না, তা নয়। কিছু পূরণ হয়েছে, তবে অনেক দাবি এখনো অপূরণীয়। পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা দাবি জানিয়েই যাব।’