শনিবার (২২ মে) বাংলাদেশ প্রাইভেট ইমপ্লয়েজ ফোরামের (বিপিইএফ) আয়োজনে ‘প্রাইভেট সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট এমিড কভিড-১৯: এক্সপেকটেশনস ফরম বাজেট এফওয়াই-২২’ (করোনাকালে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান: ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রত্যাশা) শীর্ষক এক ওয়েবিনারের এসব কথা বলেন।
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন বিপিইএফের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন ইউএনবির সিনিয়র সাব-এডিটর মুহাম্মদ আল-আমিন আবির।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বেসরকারি চাকরির বিষয়ে আমাদের এখানে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। কয় বছর পরপর একটা সার্ভে হয়। কিন্তু এমপ্লয়মেন্ট কতখানি বাড়ছে এগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। সরকার জিডিপি নিয়েই পড়ে আছে, যা ধরাও যায় না, ছোঁয়াও যায় না। ২২০০ ডলার মাথাপিছু আয় অথচ আমরা গরিব হচ্ছি।’
ক্যাপিটাল টু লেবার রেশিও বেড়ে গেছে উল্লেখ করে মনসুর বলেন, ‘আমাদের দেশি বিদেশি বিনিয়োগ অনেক কমে গেছে। কতটা কমেছে তা আমরা জানি না। তবে মেশিনারিজ আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় এটা বোঝা গেছে যে, বিনিয়োগ কমেছে। দেশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’
পেনশন ফান্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এখনো কোন পেনশন ফান্ড চালু হয়নি। এটা করা দরকার। এখন থেকে একটা সিস্টেম চালু করলেও ৩০ বছর পর একটা ফুল ফান্ড চালু হবে।’
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টারগেশন ফর ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ বলেন, ‘প্রতি বছর ৩৩ লাখ নতুন শিশু জন্ম নিচ্ছে। এর মধ্যে থেকে ২৩ লাখ লেবার ফোর্স হিসেবে আসছে। কিছু শিশু হয়তো মারা যায়। কিন্তু বাকিরা কর্মক্ষেত্রে আসছে না। যারা আসছে তাদের বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার করোনাকালে যেসব প্রণোদনা দিয়েছে তা অনেকটা লোন বেইজ। এটাও কতটুকু পেয়েছে তা ফলো করা হয় না। যারা পেল না, তারা ঠিক কি কারণে পেল না, তাও জানা যায় না। কারণ কোন ড্যাসবোর্ড নাই। এই তথ্য ভান্ডার না থাকা আমাদের একটি বড় গ্যাপ। করোনা শুরুর ১ বছর পরেও যদি আমরা বলি আমাদের ডাটাবেজ নাই এটা দুঃখজনক। আমাদের তথ্য প্রাপ্তির জায়গাটা অনেক সীমিত।’
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘গত বছর থেকে প্রায় ২ কোটি ৪৮ লাখ লোক কাজ হারিয়েছে। এরা সবাই বেসরকারি খাতের। এটা মোট কর্মঘণ্টার ১৭ শতাংশ। সরকার যদি প্রণোদনা না দিত তাহলে এটা আরও অনেক বেড়ে যেত। করোনার আগেই পোশাক খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি কমে গিয়েছিল। বিআইডিএসের ২০২০ সালের গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৬ লাখ তরুণ তরুণী কর্মসংস্থান হারিয়েছে। ইউএনডিপি বলেছে, ২৭ লাখ চাকরিজীবী তাদের চাকরি হারিয়েছে। এরা সবাই বেসরকারি খাতের। ৩৬ শতাংশ মেশিনারিজ আমদানি কমেছে, ৩৯ শতাংশ বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে। সরকার আগে যে প্রণোদনা দিয়েছিল সেখানে এমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট বলতে কিছু ছিল না। এবারের বাজেটে সরকার এটাকে যুক্ত করতে পারে। সরকারকে আরেকটা প্রণোদনা প্যাকেজ দিতেই হবে, সেটা যে নামেই হোক না কেন।’
ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, দেশের মোট চাকরিজীবীর ৯৫ শতাংশই বেসরকারি খাতে কাজ করেন। অথচ তৈরি পোশাক খাত ছাড়া অন্য কোন খাত আমরা কাঠামোয় আনতে পারিনি। আমরা যারা গণমাধ্যমে কাজ করি সেখানে অনেকেই ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করে না। অথচ সরকারি বিজ্ঞাপন নিতে হলে ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করতে হয়। আমাদের চাকরি বিধিমালা নেই, কিন্তু শ্রম আইন আছে। পোশাক খাতের মত অন্য খাতগুলোতেও প্রণোদনা দিতে হবে।’
আইসিএবি সভাপতি এম এইচ খসরু বলেন, ‘আমাদের কেবল চাকরিজীবী নয়, উদ্যোক্তাও বানাতে হবে। স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। স্বাস্থ্য খাতে গত বছর যে বরাদ্দ হয়েছে তার ৩০ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে। এটা ব্যয় করতে হবে। ট্যাক্স সহজ করে দিতে হবে যাতে সবাই ট্যাক্স দেয়।’
বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, করোনায় আমাদের পোশাক খাতে ক্ষতি অনেক হলেও আক্রান্ত হার দশমিক ৩ শতাংশ। যদিও করোনার শুরুতে ৬০-৭০ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। তবে পরে তারা আবার কর্মস্থলে বা অন্য কোথাও যোগ দিয়েছেন। এখন আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’
ডিসিসিআই সভাপতি রেজওয়ান রহমান বলেন, অর্থমন্ত্রী একটা প্রস্তাব করেছিলেন ভলান্টিয়ারি পেনশনের। এটার জন্য একটা আইন প্রয়োজন। আইন তো সব জায়গায় আছে। কিন্তু কতখানি আইনের আওতায় আনা যায় এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। গার্মেন্টস সেক্টরকে সহায়তা করায় এখন ৫০ বিলিয়ন দেওয়ার সক্ষমতা হয়েছে। অন্য খাতগুলোকে বাছাই করে সহায়তা করলে সেখান থেকেও ৫০ বিলিয়ন রপ্তানি পাওয়া যাবে।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘দেশে ৪৩টা প্রাতিষ্ঠানিক শ্রম খাত আছে। এর মধ্যে ৩২টির কোন মজুরি বোর্ড গঠিত হচ্ছে না। দেশে পর্যটন খাতে প্রায় ৫ লাখ, পরিবহন খাতে ৭০ লাখ, সেলুনে ১২-১৩ লাখ মানুষ কাজ করে। করোনাকালে এরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে। এদের নিয়ে বাজেটে ভাবা দরকার। দেশের সব শ্রম শক্তির রেজিস্ট্রেশন থাকা প্রয়োজন। দেশে জিডিপি বাড়ছে, সে অনুযায়ী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ছে কি না সেটা তো প্রয়োজন। বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের বিষয়টি বিবেচনা করে একটি ইউনিভারসাল পেনশন সিস্টমে চালু করা এখন খুবই জরুরি।’