বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। মাঝে কিছুটা দাম কমলেও প্রায় দুই মাস ধরে স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে।
বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়ে যাওয়ায় চলতি মাসে দেশের বাজারে দু’দফায় ভরিতে স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৩৭৪ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
সর্বশেষ গত ২৩ মে থেকে স্বর্ণের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, বর্তমানে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণ ৭৩ হাজার ৪৮৩ টাকা, ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭০ হাজার ৩৩৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬১ হাজার ৫৮৪ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্বর্ণের এই দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বাজুস জানায়, করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট ও নানা জটিল সমীকরণে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বন্ধ থাকা, আমদানিতে শুল্ক জটিলতা (উপকরণ কর রেয়াত) এবং নানা ধরনের দাফতরিক জটিলতায় ব্যবসায়ীরা স্বর্ণের বার আমদানি করতে পারছেন না। তাছাড়া চাহিদার বিপরীতে যোগান কম থাকায় দেশীয় বুলিয়ান/পোদ্দার মার্কেটেও স্বর্ণের দাম বেড়েছে। এ কারণে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশে যখন স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়, তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৮৮১ ডলার। গত এক সপ্তাহে তা বেড়ে এখন ১৯০৩ দশমিক ২০ ডলারে উঠেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পর বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২২ ডলার।
আগামী সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হতে পারে।
বিশ্ববাজারের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ শুরু হলে গত বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। দফায় দফায় দাম বেড়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ২ হাজার ৭৪ ডলারে উঠে যায়। তবে আগস্টে পতনের কবলে পড়ে উড়তে থাকা স্বর্ণের দাম।
১১ আগস্ট এসে বড় পতন হয় স্বর্ণের দামে। একদিনে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১১২ ডলার পর্যন্ত কমে যায়। এরপরও চলতে থাকে স্বর্ণের দরপতনের ধারা। এতে সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম সাড়ে ১৮’শ ডলারের কাছাকাছি চলে আসে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার মধ্যেই গত বছরের অক্টোবরে ইউরোপজুড়ে শুরু হয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এতে বিশ্ববাজারে আবার স্বর্ণের দামবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দেয়। ১৯’শ ডলারের নিচে নেমে যাওয়া স্বর্ণের দাম আবার ১৯’শ ডলার ছাড়িয়ে যায়। অবশ্য নভেম্বরের শেষদিকে এসে আবার পতনের মধ্যে পড়ে স্বর্ণের দাম। এতে এক সপ্তাহের মধ্যে ২৫ নভেম্বর এবং ২ ডিসেম্বর দু’দফায় দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমানো হয়।
অবশ্য ডিসেম্বরের শেষার্ধে ও চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবার বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ে। এতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে ১৯৫০ ডলারে উঠে যায়। যদিও তা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমে যায়। ফেব্রুয়ারির পতনের ধারা মার্চ মাসের শুরুতেও দেখা যায়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমে ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে বড় পতন হওয়ায় মার্চ মাসে দু’দফায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। এর মধ্যে ১০ মার্চ ভরিতে স্বর্ণের দাম কমানো হয় ২ হাজার ৪১ টাকা। তার আগে ৩ মার্চ ভরিতে স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা কমানো হয়।
মার্চের পতনের পর এপ্রিল মাসে এসে বিশ্ববাজারে আবার স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকে। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ২২ শতাংশ। এতে মাসের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
স্বর্ণের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বেড়েছে রূপার দামও। গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে রূপার দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স রূপার দাম দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯৪ ডলার। আর সবচেয়ে দামি ধাতু প্লাটিনামের দাম গত সপ্তাহে বেড়েছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স প্লাটিনামের দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৮০ দশমিক শূন্য ৩ ডলারে।